পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (BJP On SSC Tainted List) ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অযোগ্যদের তালিকা অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এই তালিকা প্রকাশের সময় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। সন্ধ্যা ৭টায় তালিকা প্রকাশের কথা ছিল, কিন্তু এক ঘণ্টা পর তা প্রকাশ করা হয়। মোট ১৮০৪ জনের নাম অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
তবে তালিকায় একাধিক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের নাম উঠে আসার পর এক নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর কুহেলি ঘোষ, পিংলার তৃণমূল নেতা অজয় মাজি, আরামবাগের তৃণমূল নেতার স্ত্রী নমিতা আদক এবং হিঙ্গল গঞ্জের তৃণমূল সভানেত্রীর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা মন্ডল এদের নামও রয়েছে সেই তালিকায়।
এই তালিকার মধ্যে এমন অনেক নাম রয়েছে যারা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিকভাবে প্রভাবশালী, যা রাজ্য রাজনীতির অন্দরে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।
এছাড়াও, ২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর, কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৩ সালে সেই নিয়োগ প্যানেল বাতিল করে দেয়। এরপর ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখে, এবং সেই সঙ্গেই অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়।
রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এই নির্দেশের পর তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হলেও, বেশ কিছু অস্পষ্টতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত, তালিকায় শিক্ষকদের বা অশিক্ষক কর্মীদের বিষয়ের নাম, তাদের কর্মস্থল, বা জেলার বিস্তারিত তথ্য নেই। অনেকেই মনে করছেন, এটি যেন ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে যাতে তদন্তের গতি বা প্রকৃতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা বজায় থাকে।
এদিকে, তালিকা প্রকাশের পরই বিজেপি নেতা তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিও পোস্ট করে গর্জে উঠেছেন। তার ক্যাপশনে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কেন অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে এত দেরি হল? এবং কেন তা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হল?” তিনি দাবি করেছেন, এই তালিকায় কোনো নির্দিষ্ট জেলা, স্কুল, বা বিষয় উল্লেখ করা হয়নি, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার অভাব নির্দেশ করে।
তিনি ভিডিওতে বলেন, “রাজ্য সরকার, তৃণমূল কংগ্রেস এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করেছে। সঠিকভাবে তথ্য না দিলে, যে কেউ দাবি করতে পারে যে তারা কোনো মিথ্যে অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে।এছাড়া, আমি জানি, অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী যারা দুর্বল পরিবারের, তাদেরও মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিল, কিন্তু যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিল, তাদের নাম বেরিয়ে যাওয়ার পরেই বিরোধীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।”
তবে, সরকারি সূত্রের মতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশাল সংখ্যক প্রার্থী অযোগ্য ছিলেন, এবং এই তালিকা প্রকাশের পর তা জনস্বার্থে জরুরি ছিল। তবে রাজনৈতিক চাপের কারণে যে এই তথ্য প্রকাশ বিলম্বিত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এছাড়া, একটি বড় প্রশ্ন উঠছে কি কারণে পুরো তালিকা প্রকাশ করতে দেরি হয়েছে? সিবিআই তদন্ত, আদালতের নির্দেশ এবং রাজনৈতিক চাপের মধ্যে পড়ে, কমিশন কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে অনেকেই বিস্মিত। বিশেষত, যে তালিকা কমিশনকে দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অনেক নাম ছিল, কিন্তু শুধুমাত্র ১৮০৪ জনের নাম কেন বের করা হল, সেই প্রশ্ন এখনই উত্তরহীন।