কলকাতা: শিয়ালদহ (Sealdah Station) ডিভিশনে প্রতিদিন লাখেরও বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন। অফিস টাইমে এই ভিড় হয়ে দাঁড়ায় আরও তীব্র। এত ট্রেন, এত রুট—সবমিলিয়ে সাধারণ যাত্রীদের জন্য অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়, ঠিক কোন প্লাটফর্মে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, তা বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতেই বড় পদক্ষেপ নিল শিয়ালদহ ডিভিশনের রেল কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি শিয়ালদহ ডিআরএম (ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার) এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্লাটফর্ম রি-অ্যালোকেশনের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার থেকে নির্দিষ্ট রুট বা শাখার ট্রেন নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম থেকেই ছাড়বে। ফলে প্লাটফর্মে গিয়ে ট্রেন ধরার আগে অযথা দৌড়ঝাঁপ বা খোঁজাখুঁজি করতে হবে না যাত্রীদের। রেল সূত্রে খবর, যাত্রীদের অসুবিধা কমাতে এবং স্টেশনে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট আরও সুশৃঙ্খল করতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
কোন শাখার ট্রেন কোন প্লাটফর্ম থেকে ছাড়বে? দেখে নিন একনজরে—
১. শিয়ালদহ মেইন শাখা (প্লাটফর্ম ১–৫):
এই প্লাটফর্মগুলি থেকে চলবে গেদে, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, নৈহাটি, কল্যাণী সীমান্ত এবং ব্যারাকপুরের লোকাল ট্রেন। এটি মূলত উত্তর-পূর্ব দিকের শাখা।
২. শিয়ালদহ মেইন শাখা (প্লাটফর্ম ৫–৮):
এই অংশ থেকে চলবে ডানকুনি এবং বারুইপুর গামী ট্রেন। একাংশ দক্ষিণ কলকাতার সাথে যুক্ত হলেও এটি এখনও মেইন লাইনের অন্তর্ভুক্ত।
৩. শিয়ালদহ মেইন শাখা (প্লাটফর্ম ৬–১০):
এই প্লাটফর্মগুলি বরাদ্দ করা হয়েছে বনগাঁ, হাবড়া, ঠাকুরনগর, হাসনাবাদ, দমদম, মধ্যমগ্রামগামী ট্রেনের জন্য। এই রুটটি মূলত উত্তর ২৪ পরগনার নানা স্টেশনকে সংযুক্ত করে।
৪. শিয়ালদহ মেইন শাখা (প্লাটফর্ম ৯, ১১ ও ১৪):
এই তিনটি প্লাটফর্ম থেকে ছাড়বে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি। যেমন, উত্তরবঙ্গ, বিহার বা ঝাড়খণ্ডের দিকে চলা এক্সপ্রেস ট্রেন।
৫. শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা (প্লাটফর্ম ১৫–২১):
এই অংশ থেকে চলবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিকে যাওয়া ট্রেনগুলি—ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর, নামখানা, সোনারপুর, ক্যানিং ও বারুইপুর গামী ট্রেন।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, প্লাটফর্মগুলিতে এবার থেকে নতুন করে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড, দিক নির্দেশক সাইনেজ ও অ্যানাউন্সমেন্ট আরও বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে মোবাইল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটেও এই তথ্য আপডেট থাকবে।
অনেক অফিসযাত্রী জানিয়েছেন, “এতদিন ধরে আমরা হুড়োহুড়ি করতাম, কোথা থেকে কোন ট্রেন ছাড়বে বুঝে উঠতে পারতাম না। এখন যদি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মেই নির্দিষ্ট রুটের ট্রেন চলে, তাহলে অনেকটাই সময় বাঁচবে এবং স্টেশনে বিশৃঙ্খলা কমবে।”
এখন দেখার, এই নতুন ব্যবস্থা কবে থেকে পুরোপুরি চালু হয় এবং কতটা কার্যকরী হয় বাস্তবে। তবে আপাতত শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রী পরিষেবাকে আরও সুশৃঙ্খল করার এই পদক্ষেপে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন বহু সাধারণ যাত্রী।