বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল (Beleghata ID hospital) চত্বরে উদ্ধার হওয়া খুলি এবং হাড়গোড়ের ঘটনায় শুক্রবার সকালে এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। হাসপাতাল চত্বরে একটি পরিত্যক্ত মর্গের সামনে এই খুলি এবং হাড়গোড় পাওয়া যায়, যা নিয়ে ধন্দ সৃষ্টি হয়েছে। কীভাবে এবং কেন এই দেহাবশেষগুলি হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত হলো, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত নানা বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে এবং অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, এগুলি কী গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ‘ডেথ অডিট’ বাধ্যতামূলক, জানাল স্বাস্থ্য দপ্তর
হাসপাতালের কর্মীরা প্রথমে খুলি ও হাড়গোড়ের উপস্থিতি দেখে একে অপরকে জানিয়ে দেন। দ্রুত তারা ওই জায়গায় জড়ো হতে থাকেন এবং পুলিশে খবর দেওয়া হয়। যদিও ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি ততক্ষণে না হওয়া পর্যন্ত, এগুলি সম্পর্কে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা বা শবদেহ সংক্রান্ত গবেষণা সাধারণত এমনভাবে পরিচালিত হয় না, যাতে কোনো মানবদেহের অংশ অকালে এমন জায়গায় পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এগুলিকে গবেষণায় ব্যবহৃত দেহাবশেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে, কিন্তু তা যদি সত্যি হয়, তবে এভাবে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা বা আইনি অনুমতি ছাড়া সেগুলি রাখা অত্যন্ত অসঙ্গত এবং বেআইনি।
এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের পরিষ্কার বক্তব্য পাওয়া না যাওয়ায়, বিষয়টি আরও রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে অপেশাদার বা অব্যবস্থাপনার ফল বলে মনে হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা কোনও উচ্চতর ব্যবস্থাপনার অধীনে হওয়া উচিত ছিল, যেখানে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার এক গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশেষত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিতে এখানে বহু শিক্ষার্থী আসেন। কিন্তু সম্প্রতি, হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা ও পরিবেশগত সমস্যার কথা উঠে আসছিল। এই নতুন ঘটনা, যা হাসপাতালের ভেতরের পরিস্থিতি নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, সে সম্পর্কে আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পরে, স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন যে, চিকিৎসা বা গবেষণার অছিলায় যদি মানুষকে অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তা শহরের মানুষের নিরাপত্তার জন্যও বিপদজনক হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশও তাদের তদন্ত শুরু করেছে, তবে সঠিক কারণ বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকেই মনে করছেন, এগুলি শবদেহ থেকে নেওয়া হাড়গোড় হতে পারে, যা ভুলভাবে এখানে রাখা হয়েছিল। কিছু মানুষের ধারণা, এগুলি চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু এর কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
এমনকি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একেবারে নীরবতা, বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে দেহাবশেষের ব্যবহার সম্পর্কিত স্পষ্ট আইন ও বিধি রয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, কিন্তু এখানে তার সম্পূর্ণ অভাব দেখা গেছে।
অপহরণ-তোলাবাজির দায়ে পল পগবার ভাইয়ের কারাদণ্ড
এই পরিস্থিতিতে, পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে সব কিছুর পরিষ্কার ব্যাখ্যা বের করার চেষ্টা করছে, যাতে সাধারণ মানুষকে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি বা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন না হয়। তবে, এ ঘটনা যদি প্রমাণিত হয় যে, চিকিৎসা গবেষণার জন্য এই হাড়গোড় আনা হয়েছিল, তবে সেই গবেষণার উদ্দেশ্য এবং প্রক্রিয়ার বিষয়ে আরও সতর্ক এবং আইনসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যাবে।
সার্বিকভাবে, এটি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা হাসপাতালে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা এবং নৈতিকতার প্রশ্ন সামনে এনেছে।