বাংলাদেশের ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটে (Satyajit Ray)। হরিকিশোর রায় রোডে অবস্থিত এই বাড়িটি এক সময় বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাদেমির ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হতো। সেই ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙে বহুতল নির্মাণের পরিকল্পনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। রায় পরিবার বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক। উপেন্দ্রকিশোর বাংলার নবজাগরণের একজন স্তম্ভ। তাই আমি মনে করি, এই বাড়ি বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।”
খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা, স্বয়ং স্বনামধন্য সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্মৃতিজড়িত তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে খবর প্রকাশিত।
এই সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের। রায় পরিবার বাংলার…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) July 15, 2025
প্রসঙ্গত, হরিকিশোর রায় ছিলেন বাংলাদেশের একজন আইনজীবী এবং পরবর্তী কালে বিপুল সম্পত্তির অধিকারী। তাঁর পালকপুত্র উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক, যিনি দীর্ঘ সময় এই বাড়িতে বসবাস করেছেন। সেই স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে কাটিয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের শৈশবের কিছু সময়ও। ফলে এই বাড়ি শুধু একটি আবাসস্থল নয়, বরং বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক জীবন্ত নিদর্শন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সাল থেকে দেড়শতাধিক বছর পুরনো বাড়িটি বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাদেমির ভবন হিসাবে ব্যবহার করা হতো। তবে ২০০৭ সালে বাড়িটির গঠনগত দুর্বলতার কারণে শিশু অ্যাকাদেমির কার্যক্রম স্থানান্তরিত করা হয়। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাড়িটি ভেঙে সেখানে আধুনিক বহুতল তৈরি করা হবে।
এই খবরে প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ মহলে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। শশীলজ জাদুঘরের মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য। তিনি অনুরোধ করেছেন, বাড়িটি ভাঙা বন্ধ করে একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য স্থল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বাংলাদেশের সরকারের কাছে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে বলেন, “আমি বাংলাদেশ সরকার ও ওই দেশের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে আবেদন করব, এই ঐতিহ্যশালী বাড়িটিকে রক্ষা করার জন্য। ভারত সরকার বিষয়টিতে নজর দিন।”
মমতার এই আহ্বানে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতি মহলে সাড়া পড়েছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সরকারের কাছে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপত্য সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের এই বাড়ি যদি ভেঙে ফেলা হয়, তবে তা হবে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক অপূরণীয় ক্ষতি—এমনটাই মত ঐতিহাসিক ও গবেষকদের একাংশের। এখন দেখার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আন্তরিক আবেদন বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে কিনা।