সন্দেশখালি হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

সন্দেশখালির (Sandeshkhali) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের একটি যুগান্তকারী রায় রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পদ্মা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া মণ্ডল গায়েনের স্বামীদের…

Kolkata high court orders for CBI enquery in sandeshkhali

সন্দেশখালির (Sandeshkhali) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের একটি যুগান্তকারী রায় রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পদ্মা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া মণ্ডল গায়েনের স্বামীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিবিআই-এর হাতে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই রায়কে সত্যের জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে, বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।

তিনি বলেছেন “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। (Sandeshkhali)  এই ঘটনায় শ্রীকৃষ্ণের অমর বাণী—“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত, অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম”—এর প্রাসঙ্গিকতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”

   

২০১৯ সালের ৬ জুন সন্দেশখালিতে তিন বিজেপি কর্মী—প্রদীপ মণ্ডল, দেবদাস মণ্ডল এবং সুকান্ত মণ্ডল—নৃশংসভাবে খুন হন। অভিযোগ, তাদের দেহ ধ্বংস করা হয়েছিল। পদ্মা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া মণ্ডল গায়েনের অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি এফআইআর দায়ের হয়।

তদন্তের জন্য সিআইডি-র হাতে দায়িত্ব দেওয়া হলেও, অভিযোগ উঠেছে যে প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহানের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এবং অভিযোগ করা হয়েছে যে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানম এবং হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, সন্দেশখালির (Sandeshkhali) ঘটনাগুলি অত্যন্ত জটিল এবং নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন। আদালত জানিয়েছে, সিবিআইকে এই তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করতে হবে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া আদালতের তত্ত্বাবধানে হবে। এছাড়াও, সিবিআইকে একটি পৃথক পোর্টাল বা ইমেল আইডি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সন্দেশখালির ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারেন।

এই রায়কে সত্যের জয় হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরে এই হত্যাকাণ্ডের সত্যকে দমন করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সত্য দীর্ঘদিন দমন করা যায় না।” তিনি হাইকোর্টের এই রায়কে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, এটি অসহায় মানুষের জন্য ন্যায়ের পথ প্রশস্ত করবে।

সন্দেশখালি (Sandeshkhali) কেবল এই হত্যাকাণ্ডের জন্যই নয়, বরং জমি দখল, যৌন নির্যাতন এবং জোরপূর্বক অপকর্মের অভিযোগের জন্যও বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে কলকাতা হাইকোর্ট সন্দেশখালির জমি দখল এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগের তদন্তের জন্যও সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল। আদালত বলেছিল, যদি এই অভিযোগের এক শতাংশও সত্য হয়, তবে তা রাজ্যের জন্য লজ্জাজনক। এই প্রেক্ষাপটে হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের নির্দেশ আরও তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisements

তৃণমূল কংগ্রেস এই রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দেয়। বিচারপতি বিআর. গাভাই এবং কে.ভি. বিশ্বনাথনের বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, “রাজ্য কেন কিছু ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় এত আগ্রহী?” এই পর্যবেক্ষণ রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

সন্দেশখালির (Sandeshkhali) মহিলারা, বিশেষ করে পদ্মা মণ্ডল এবং সুপ্রিয়া মণ্ডল গায়েন, এই রায়কে তাদের ন্যায়ের লড়াইয়ে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে তাদের স্বামীদের হত্যার পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এই রায় তাদের আশা জাগিয়েছে যে সিবিআই তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে।

রাজনৈতিক মহলে এই রায় নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিজেপি এই রায়কে তৃণমূল সরকারের “অপরাধীদের প্রশ্রয় (Sandeshkhali) দেওয়ার নীতি”র বিরুদ্ধে জয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ বলেন, “এই রায় তৃণমূলের প্রকৃত চেহারা উন্মোচন করেছে।” অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই অভিযোগগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিজেপি সন্দেশখালিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

তেলেঙ্গানায় রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত ৮, আহত বহু

শ্রীকৃষ্ণের বাণী—“পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম”—এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলায় নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে একটি অবতারের ভূমিকা পালন করেছে। এই রায় সন্দেশখালির অসহায় মানুষের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি আশার আলো হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে সিবিআই তদন্ত কী ফল দেয়, তা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News