সন্দেশখালি, পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট গ্রাম, যেখানে এক সময় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের প্রতিবাদের কথা শোনা যেত। এই এলাকায় শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের মতো নেতারা স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। কিন্তু, এক সময় এই নেতাদের বিরুদ্ধে জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। গ্রামের মহিলারা লাঠি ও ঝাঁটা নিয়ে এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার ফলে এই নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগও উঠেছিল।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই, সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা সামনে এসেছে। সম্প্রতি, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে বড় বিপদের মুখে ফেলেছে। ইডি আদালতে আবেদন জানিয়েছে, সন্দেশখালিতে বাজেয়াপ্ত করা তিনটি এসইউভি গাড়ি নিলাম করার জন্য। এই গাড়িগুলির মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা এবং এগুলির উপর তদন্ত চালানোর পর ইডি এগুলিকে বাজেয়াপ্ত করেছে। গাড়িগুলি বর্তমানে সিজিও কমপ্লেক্সে রাখা রয়েছে, এবং এগুলির নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এসব গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি শেখ শাহজাহানের নামে নিবন্ধিত। অপর গাড়ি শেখ শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীরের নামে এবং তৃতীয় গাড়িটি পাঞ্জাবের একটি সংস্থার নামে নিবন্ধিত। এই গাড়িটি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে কেনা হয়েছিল, এবং তার দাম ছিল ২০ থেকে ২৩ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে, শেখ আলমগীরের মালিকানাধীন গাড়িটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কেনা হয়েছিল, যার দাম ছিল ২৪ থেকে ২৭ লক্ষ টাকা।
শুধু গাড়ি নয়, সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের বিপুল সম্পত্তি নিয়েও তদন্ত চলছে। তদন্তকারীরা সন্দেশখালির সরবেড়িয়া নতুন বাজারের একটি গোডাউনে গাড়িগুলি বাজেয়াপ্ত করার পর, তাদের আরও সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। এসব সম্পত্তি নিয়ে ইডি আরও তদন্ত চালাচ্ছে, এবং এটি নিশ্চিত যে শাহজাহানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠতে পারে।
এদিকে ২০২৫ সালের প্রথম মাসে নতুন একটি ধর্ষণের অভিযোগও সামনে এসেছে। এটি সন্দেশখালির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা যাচ্ছে, যদিও এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তদন্ত চলছে। এই ধর্ষণের ঘটনা নতুন করে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে, কারণ একদিকে রাজনীতির শীর্ষে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, অন্যদিকে এমন গুরুতর অপরাধের ঘটনাও ঘটছে।
এমন পরিস্থিতিতে, সন্দেশখালির মানুষ আবারও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট বেড়েছে, এবং তারা এখন সরকারের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করছে। নেতাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতি এবং অপরাধের অভিযোগ যতই সামনে আসুক না কেন, সাধারণ জনগণের মনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে।
সব মিলিয়ে, সন্দেশখালির রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি এখন এক কঠিন মোড়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।