২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস উপলক্ষে যখন রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা, তখন এক অন্য পথে পা বাড়ালেন রাজ্যের একাংশ চাকরিচ্যুত শিক্ষক-শিক্ষিকারা (Sacked Teachers)। তৃণমূলের মেগা সমাবেশ এড়িয়ে তাঁরা যাচ্ছেন দিল্লিতে, নিজেদের ন্যায্য দাবি জানাতে রাষ্ট্রপতি এবং বিরোধী নেতার দরবারে।
‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ব্যানারে ১২০ জন চাকরি হারানো শিক্ষক-শিক্ষিকা আজ অর্থাৎ ২১ জুলাই দিল্লি রওনা দিচ্ছেন। আগামীকাল থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত দিল্লির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাঁদের কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। মূলত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করাই তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। পাশাপাশি, রামলীলা ময়দানে ধর্নাতেও বসবেন তাঁরা। দিল্লিতে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা জাতীয় স্তরে তাঁদের আন্দোলনকে তুলে ধরতে চান।
চাকরি হারানো এক শিক্ষিকার কথায়, “বহু বছর ধরে আমরা লড়াই করছি। আদালত একাধিকবার আমাদের পাশে থেকেছে। কিন্তু সরকার আমাদের ফিরে নিচ্ছে না। তাই এবার দিল্লির পথে। এই সরকার কিছুই শুনছে না। এখন রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে আমাদের অবস্থা জানাব।”
এই কর্মসূচির জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজস্ব খরচেই রেল টিকিট ও দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দিল্লি পৌছেই তাঁরা প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ায় একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করবেন, যেখানে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন।
‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর তরফে জানানো হয়েছে, দিল্লি গিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতি ভবনে স্মারকলিপি জমা দেবেন। রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ চেয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথাও হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
এদিকে ২১ জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষে কলকাতার ধর্মতলায় যখন উৎসবমুখর পরিবেশ, তখন এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিল্লিগামী সিদ্ধান্ত তৃণমূল সরকারের প্রতি তীব্র বার্তা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আন্দোলনকারীদের একাংশের বক্তব্য, “আমরা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই, কিন্তু রাজ্যের সরকারের কাছে আমাদের আর কিছু আশা নেই। আমাদের চাকরি ফেরত পেতে হলে এবার জাতীয় স্তরে লড়াই করতে হবে।”
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, ঘুষের অভিযোগ এবং এসএসসি কেলেঙ্কারি ঘিরে রাজ্যে বহু শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। কলকাতা হাই কোর্ট ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নিয়োগ বাতিল করেছে। ওই সমস্ত মামলায় সরাসরি প্রভাব পড়েছে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর উপর। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যেই স্কুলে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে যায়।
চাকরি ফেরতের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন করে আসছেন তাঁরা। কখনও ধর্মতলায়, কখনও এসএসসি অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এবার সেই আন্দোলন রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল রাজধানীতে।
দিল্লিতে তাঁদের এই কর্মসূচি আদৌ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা সময়ই বলবে। তবে একুশে জুলাইয়ের দিন দিল্লিমুখী এই আন্দোলন যে তৃণমূল সরকারের কাছে এক প্রতীকী বার্তা, তা বলাই যায়।