চাকরি গেল, জীবনও! আন্দোলনের মাঝেই প্রবীণ শিক্ষক ব্রেন স্ট্রোকে প্রয়াত!

একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে তীব্র মানসিক (Sacked Teacher) চাপ। তারই মধ্যে হারিয়ে গেল আরও একটি প্রাণ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন অমুইপাড়া উদ্বাস্তু বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন শিক্ষক প্রবীণ…

Heartbreak in Bengal: Jobless Teacher Praveen Dies Amid Protests

একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে তীব্র মানসিক (Sacked Teacher) চাপ। তারই মধ্যে হারিয়ে গেল আরও একটি প্রাণ। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন অমুইপাড়া উদ্বাস্তু বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন শিক্ষক প্রবীণ কর্মকার। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে চাকরি হারানো ১৯ হাজার শিক্ষকের মধ্যেই ছিলেন প্রবীণ। আন্দোলনে যোগ দিয়ে নিজের অধিকার দাবি করছিলেন। কিন্তু হঠাৎই সব শেষ। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোক আর ক্ষোভে বিস্ফোরিত হয়ে উঠেছে চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন।

রঘুনাথগঞ্জের হরিদাসনগরের বাসিন্দা প্রবীণ কর্মকার ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ কয়েক বছর রাজ্যের স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৬ প্যানেল বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার চাকরি বাতিলের পথে হেঁটেছে। এর জেরেই চাকরি হারান প্রবীণসহ আরও হাজার হাজার শিক্ষক।

   

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রবীণ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই গভীর উদ্বেগ ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। তাঁর মধ্যে একরাশ হতাশা কাজ করছিল, যেটি আরও প্রকট হয় যখন আন্দোলনেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলেন না তিনি। বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে ব্রেন স্ট্রোক হয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এই মৃত্যুর খবর আন্দোলনকারীদের মধ্যে শোক ও ক্ষোভের নতুন তরঙ্গ তৈরি করেছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষক বলেন, “এটা শুধুমাত্র প্রবীণের মৃত্যু নয়। এটা সরকারের সহানুভূতির অভাবে একটা শিক্ষিত, অভিজ্ঞ মানুষের ভেঙে পড়ার প্রতিচ্ছবি।”

চাকরিহারা শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, যাঁরা বছরের পর বছর শিক্ষকতা করেছেন, তাঁদের হঠাৎ করে চাকরি হারানো অমানবিক। তাঁদের বক্তব্য, “এতদিন পড়িয়ে এসে, এখন আবার নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে—এটা আমাদের আত্মমর্যাদায় আঘাত। আমরা অপরাধী নই। আমাদের প্রতি এ একপ্রকার অবিচার।”

Advertisements

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই রাজ্য সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করবে। ফলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি হচ্ছে। কিন্তু তাতে চাপ আরও বেড়েছে চাকরিহারাদের ওপর। যাঁরা বয়সের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছেন, কিংবা যাঁদের পরিবার নির্ভরশীল ছিল এই চাকরির ওপর, তাঁদের কাছে নতুন করে পরীক্ষা মানেই মানসিক যন্ত্রণা।

প্রবীণের মৃত্যু সেই যন্ত্রণার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরিহারা শিক্ষকরা শোকবার্তা দিয়ে লিখেছেন, “সরকারের সহানুভূতি না থাকলে, বাংলার মাটিতে আরও লাশ পড়বে। আমরা শিক্ষক, কিন্তু আমাদের সঙ্গে একঘরে মানুষের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—যে রাজ্যে শিক্ষকের এত ঘাটতি রয়েছে, সেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষকরা যদি নতুনভাবে মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ে যান, তাহলে ছাত্রসমাজই বা কেমনভাবে প্রভাবিত হবে?

আরও বড় প্রশ্ন—এই অস্থিরতা ও অসহায়তার আবহে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শিক্ষকদের পাশে কে দাঁড়াবে?

প্রবীণ কর্মকারের মৃত্যু যেন শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং পুরো শিক্ষক সমাজের লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। তাঁর মৃত্যু আরও একবার দেখিয়ে দিল, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ভার কতটা মর্মান্তিক হতে পারে একজন মানুষের জীবনে।