শিঙাড়া-জিলিপির উপরে কেন্দ্রের সতর্কীকরণ গুজব, প্রতিক্রয়া মমতার

শুধু নোনতা বা মিষ্টি নয়, শিঙাড়া আর জিলিপি বাঙালির (SAMOSA-JALEBI) আত্মিক আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। সন্ধ্যাবেলায় চায়ের সঙ্গে আড্ডা হোক বা হঠাৎ করে অতিথি আসা—শিঙাড়া-জিলিপি…

Fired SSC Teachers Return to CM’s Residence, Await Mamata’s Response

শুধু নোনতা বা মিষ্টি নয়, শিঙাড়া আর জিলিপি বাঙালির (SAMOSA-JALEBI) আত্মিক আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। সন্ধ্যাবেলায় চায়ের সঙ্গে আড্ডা হোক বা হঠাৎ করে অতিথি আসা—শিঙাড়া-জিলিপি যেন এক অনিবার্য কম্বো। আর এই দুই খাবারের উপরে কেন্দ্রের তরফে সতর্কীকরণ জারি হওয়াতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট বোর্ড’-এর নির্দেশ অনুযায়ী, দেশের সমস্ত কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন থেকে শিঙাড়া-জিলিপির মতো ভাজাভুজি খাবারের পাশে স্টিকার বা পোস্টারের মাধ্যমে জানাতে হবে সেই খাবারে ক্যালোরি, চিনি এবং ট্রান্স-ফ্যাটের মাত্রা কতটা। অর্থাৎ, কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও এই খাবার ‘অস্বাস্থ্যকর’—এই সতর্কীকরণ বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে।

   

এই নির্দেশিকা নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এক্স-এ লেখেন, “কিছু সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশে শিঙাড়া-জিলিপি খাওয়া যাবে না। এটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও নির্দেশিকা নয়। আমরা এই নিয়ম চালু করব না। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করা সঠিক নয়।”

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও কড়া ভাষায় এর প্রতিবাদ করে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার শিঙাড়া-জিলিপির ওপর ফতোয়া জারি করেছেন। বাংলার ঘরের খাবারে এই ধরনের বিধি-নিষেধ চলবে না। কে কী খাবে সেটা তার একান্ত নিজের ব্যাপার। স্বাস্থ্যসম্মত ও গুণগত মান থাকলেই যথেষ্ট। তামাকজাত দ্রব্যের মতো সতর্কীকরণ এইসব খাবারের সঙ্গে তুলনা করা হাস্যকর।”

Advertisements

চিকিৎসকদের একটি অংশ অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। তাঁদের মতে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হার্টের অসুখ, স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চর্বি ও চিনি-জাতীয় খাবার অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়াই একাধিক জটিল রোগের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে বিতর্কের মধ্যেই প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (PIB) ফ্যাক্ট চেক বিভাগ স্পষ্ট করেছে, এই ধরনের কোনও বাধ্যতামূলক নিয়ম রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া শিঙাড়া-জিলিপি বা অন্য ভারতীয় স্ট্রিট ফুডের জন্য নেই। নির্দেশিকা কেবলমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কিছু বিশেষ সংস্থার জন্য পরামর্শমূলক।

এই তালিকায় শুধু শিঙাড়া-জিলিপিই নয়, রয়েছে গুলাবজামুন, বড়াপাও, পকোড়া, চিপস ইত্যাদিও। তবে, বাংলার আবেগ-ঘন এই দুটি খাবার নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের সংঘাত নতুন মাত্রা পেল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজ্য সরকারের স্পষ্ট অবস্থান, মানুষের রুচিতে সরকারি হস্তক্ষেপ অনুচিত এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়।

এককথায়, শিঙাড়া-জিলিপি কেবল খাবার নয়, এ বাঙালির সংস্কৃতি ও আবেগের অংশ। আর সেই আবেগে কেন্দ্রের ‘হেলথ লেবেল’ ঢোকানো সহজ কাজ নয় বলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা—“খাবারে কোনও ফতোয়া নয়!”