গুজবেই শিশুর মা হয়ে গেলেন শিশুর পাচারকারী? বিরাটির ব্যাগ-কাণ্ড ফাঁস

শুধুমাত্র ভাষা ঠিকঠাক না বোঝা, আর কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতা। এই দুইয়ের সঙ্গে যদি গুজব যোগ হয় তাহলে যে কি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সেটা…

Leaked Bags Found at Birati Station

শুধুমাত্র ভাষা ঠিকঠাক না বোঝা, আর কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনতা। এই দুইয়ের সঙ্গে যদি গুজব যোগ হয় তাহলে যে কি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সেটা দেখিয়ে দিল আজকে বিরাটি স্টেশনের (Birati Station) ঘটনা । যে মহিলাকে বাজারের ব্যাগে করে বাচ্চা পাচার করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, শেষমেষ জানা গেল তিনি সেই বাচ্চাটিরই মা। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির জন্য সকালবেলা অফিস টাইমে কুরুক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল বিরাটি স্টেশনে। শুধু সাধারণ মানুষ নয় গুজবের ফাঁদে পা দিল সংবাদ মাধ্যমও।

বারাসাত জিআরপি সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, তাতে দুটো সম্ভাবনার দিক উঠে এসেছে। প্রথমত মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় এই ভদ্রমহিলা যার নাম ‘বাসন্তী’ বলে জানা যাচ্ছে, তিনি কোন কারণে বাচ্চাটিকে ব্যাগের মধ্যে নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলেন। এটাও জানা যাচ্ছে যে তিনি উড়িয়াভাষী। একটি সূত্রের মতে তিনি মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা, অপর পক্ষের বক্তব্য যে দমদমের পার্শ্ববর্তী কোনও এক বস্তিতে এই ভদ্রমহিলা থাকেন। তবে বারাসাত জিআরপি সূত্রে খবর ভদ্রমহিলা বামনগাছিতে থাকেন। তিনি খুব সম্ভবত সেখান থেকেই ট্রেনে উঠেছিলেন।

   

প্রচন্ড গরম এবং খিদের মধ্যে বাচ্চাটি যখন কান্নাকাটি শুরু করে, তখন খুব সম্ভবত এই ভদ্রমহিলা বাচ্চাটিকে ব্রেস্টফিড করাতে চান। আর সেই সময় ঘটে বিপদ। একেতেই ছেলে ধরার গুজবে এই মুহূর্তে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশ জেরবার। প্রশাসনের তরফে বারংবার আবেদন নিবেদন করেও কোনও রকম ভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না গুজব ছড়ানো। আর তারই মধ্যে চলন্ত ট্রেনে এই ঘটনাতে যেন গুজবের বিস্ফোরণ ঘটে গেল সকাল আটটার দত্তপুকুর লোকালে।

তার উপরে লোকজনের প্রশ্ন বুঝতে না পেরে ঠিকঠাক মতো উত্তর হয়তো দিতে পারেনি ওই শিশুটির মা। আর তাই পাচারকারীর তকমা লেগে গেল তাঁর গায়ে। বারাসাত জিআরপি সূত্রে খবর সেখানে গিয়েও দীর্ঘক্ষণ কিছু ঠিকঠাক মতো বলতেই পারেননি এই ভদ্রমহিলা। পরবর্তীকালে বারাসাত জিআরপির মহিলা ওসি গোটা বিষয়টি দেখভাল করা শুরু করলে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য।

প্রথমে বাচ্চাটিকে সেফ হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মায়ের কাছেই ফিরিয়ে আনা হয় শিশুটিকে। খবর পেয়ে ভদ্র মহিলার স্বামীও ছুটে আসেন। গোটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ধ্যের কিছুটা পরে মহিলা এবং শিশুকে এই ভদ্রলোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে একটা ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি, আর গুজবে তৈরি হওয়া আতঙ্ক কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, তার সাক্ষী হয়ে রইল আজকের বিরাটি স্টেশন। তবে প্রথম দফায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে ভুল তথ্য এসেছে সাংবাদিকদের কাছে, তাতে তাঁরাও অনিচ্ছাকৃতভাবেই আজকের এই গুজবের ফাঁদে প্রাথমিকভাবে পা দিয়ে ফেলেছেন। এই মুহূর্তে তাই প্রশাসনের অন্যতম লক্ষ্য, যে করে হোক সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বিভিন্ন পাবলিক ফোরামে এই ধরনের গুজব এবং ভুল তথ্য ছড়ানোটা বন্ধ করা।