গত কয়েকদিন ধরেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে অনির্বাণ ভট্টাচার্যের গানের দল ‘হুলি গান ইজম’। তাঁদের সাম্প্রতিক একটি মঞ্চ উপস্থাপনায় ব্যবহৃত গান ও তার লিরিক ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই গানের কিছু অংশে ‘সনাতন ধর্ম’ সংক্রান্ত শব্দচয়ন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বহু নেটিজেন, এমনকি সরাসরি কটাক্ষ করেছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh) । ফলে সাংস্কৃতিক জগতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক — শিল্পের স্বাধীনতা বনাম ধর্মীয় সংবেদনশীলতা।
কি রয়েছে গানটিতে?
‘হুলি গান ইজম’-এর গান সাধারণত সমাজের নানা অন্ধকার দিক, রাজনৈতিক বিদ্রূপ কিংবা প্রচলিত বিশ্বাস ব্যবস্থার প্রতি ব্যাঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তৈরি হয়। এই দলটি মূলত অনির্বাণেরই ভাবনা, তাঁর কণ্ঠে এবং ভাবনায় তৈরি একধরনের সামাজিক গানের মাধ্যম।
তবে সাম্প্রতিক যে গানটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটির কিছু লাইন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে যে, তা সনাতন ধর্ম-এর ভাবাবেগে আঘাত করছে। যদিও গানটিতে সরাসরি ধর্ম অবমাননা নেই বলেই মত অনেকের, কিন্তু একাংশের মতে, লিরিক্সের শব্দচয়ন বা উপস্থাপনায় ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যঙ্গ রয়েছে, যা অনেকের ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করেছে।
রুদ্রনীলের (Rudranil Ghosh) কটাক্ষ
এই প্রসঙ্গে নিজের মত স্পষ্ট করেছেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ(Rudranil Ghosh) । সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি সরাসরি অনির্বাণকে আক্রমণ করে লেখেন, “শিল্পের নামে কি ইচ্ছে তাই বলার স্বাধীনতা নেই। যাঁরা স্বাধীনতার কথা বলেন, তাঁরাই যেন সবচেয়ে বেশি দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে পড়েছেন।”
তিনি আরও লেখেন, “তিন ঘোষ, চতুর্থ ঘোষ, এখন কি পাঁচমিশেলি চটকদার বিতর্ক তৈরি করাই লক্ষ্য? ধর্ম নিয়ে ব্যঙ্গ করা কি প্রগতিশীলতা হয়ে গেল?”
এই পোস্টে অনেকে রুদ্রনীলের (Rudranil Ghosh) পাশে দাঁড়িয়েছেন, আবার অনেকে বলেছেন তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ নিয়ে অনির্বাণকে আক্রমণ করছেন।
অনির্বাণের পক্ষের যুক্তি
যদিও এই বিতর্ক নিয়ে অনির্বাণ ভট্টাচার্য এখনও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এই গানটিতে ধর্ম নয়, ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, গানের মূল বার্তা বিকৃত করে ছড়ানো হচ্ছে।
অনেক সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ এবং অনির্বাণের অনুরাগীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ধর্ম যদি সত্যিই মজবুত হয়, তাহলে ব্যঙ্গাত্মক গানের সামনে সে কাঁপবে কেন?” আবার কেউ কেউ লিখেছেন, “এটা ‘ফ্রিডম অফ স্পিচ’ এর জায়গা, রুদ্রনীলের মতো শিল্পীদেরও তো এক সময় এমন প্রতিবাদী মনোভাব ছিল!”
শিল্পের স্বাধীনতা না ধর্মের অবমাননা?
এই বিতর্ক ফের একবার সামনে তুলে আনছে বহু পুরনো প্রশ্ন— শিল্পীরা কি সামাজিক বা ধর্মীয় বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন? নাকি সেই মতামতেরও সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত?
ভারতের মতো একটি বহু ধর্ম, বহু মত ও ভাষার দেশে এই প্রশ্নটির জটিলতা আরও বেড়ে যায়। যেখানে একদিকে সংবিধান মতপ্রকাশের অধিকার দেয়, অন্যদিকে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা রক্ষার দায়ও সবার আছে।