কলকাতার বাজারে পেঁয়াজ (Price Hike) এবং আলুর দাম নিয়ে এক বিশাল সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা যে আকাশছোঁয়া দামে (vegetable price) পণ্য কিনছেন, তা তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ করে দিয়েছে। একদিকে যেমন বাজারে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, তেমনই দামবৃদ্ধির (vegetable price) কারণে শাকসবজি (Price Hike) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারের এই অবস্থায় ক্রেতাদের মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘‘খাব কী?’’
কলকাতার বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম (vegetable price) ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম আর্থিক চাপে পড়েছেন। বিশেষত পেঁয়াজ এবং আলুর দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পেঁয়াজের দাম (vegetable price) ৭০-৭৫ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, আর আলু ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে দাম (vegetable price) নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের একটি বিশেষ টাস্কফোর্স, যার নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী রবীন্দ্র কুমার কোলে, একটি অপ্রত্যাশিত তল্লাশি অভিযান চালান। এই অভিযানে তারা শহরের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ এবং আলুর দাম নিয়ে বড় ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখতে পান। উদাহরণস্বরূপ, মানিকতলা, বাগমারি এবং গুরুদাস বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি, আর আলু ৩২-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল।
অফিসাররা জানিয়েছেন যে, শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে কোলে বাজারে পেঁয়াজের নতুন ব্যাগ এসেছে, যার দাম ছিল ১,৬০০ টাকা। তবে আগের সময়ে এই একই ব্যাগের দাম ছিল ২,৭০০ টাকা। এর ফলে স্পষ্ট হয় যে, পাইকারি বাজার এবং খুচরা বাজারে দাম নিয়ে এক বিরাট ফারাক রয়েছে। এমনকি একাধিক বাজারে পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করছে। উদাহরণস্বরূপ, কোলে বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫০-৫৫ টাকা কেজি হলেও, উত্তর কলকাতার বরণগর বাজারে সেই দাম ৭৫-৮০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
রবীন্দ্র কুমার কোলে এই অবস্থাকে একটি সাময়িক সমস্যা হিসেবে দেখছেন। তিনি আশাবাদী যে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দাম কমে যাবে। কোলে জানিয়েছেন, “৩০ নভেম্বরের মধ্যে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে বাজারে ছাড়া হবে। তার পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে স্থানীয় ফসল বাজারে আসার ফলে সবজির দাম কমে যাবে।” এছাড়াও, ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন যেন দ্রুত পণ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়, যাতে বাজারের উপর চাপ কমানো যায়।
কলকাতার বাজারে বর্তমানে যে দাম বাড়ছে তা কেবলমাত্র একটি সময়সীমার সমস্যাই নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ট্রেন্ডের অংশ হতে পারে, যেখানে সঙ্কটের সময়ে একাধিক কারণের সমন্বয়ে সবজির দাম চড়চড়ে বেড়ে যায়। একদিকে, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবহন খরচও অনেক বেড়ে গেছে। এই সমস্ত কারণে বাজারে দামের পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও, শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য যে স্থানীয় ফসলের উৎপাদন শুরু হয়েছে, তা কিছুটা দামের সমন্বয় ঘটাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। যেমন, পেঁয়াজের দাম কখনও কখনও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, যা শুধুমাত্র মুদ্রাস্ফীতির ফলে নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারের সাপ্লাই চেইনেও প্রভাবিত হতে পারে।
বাজারে দাম কমানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন, যেমন দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, বাজার মনিটরিং বৃদ্ধি করা এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি আরও কড়া নজর রাখা। স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি, সঠিক শীতকালীন সবজির জমি ব্যবস্থাপনা এবং সঞ্চয়ের সুযোগ তৈরি করা জরুরি।
পেঁয়াজ এবং আলুর দাম বাড়ার ফলে কলকাতার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। যারা দৈনিক বাজারে এক সময়ে সবজি কিনতে আসেন, তারা এখন সীমিত পরিমাণে বাজার করছেন। বিশেষত নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এই দাম বাড়ানোর ফলে তাদের দৈনন্দিন খাদ্য বাজেটে সমস্যা অনুভব করছে।
আসলে, কলকাতায় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অবিলম্বে এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে, কৃষি খাতে আরো অনেক উন্নতি এবং সমন্বয় প্রয়োজন। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যাতে সহজে এবং সুলভে পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য সবজি কিনতে পারেন, সে জন্য শুধু সরকারি দামে বিক্রি বা শীতকালীন উৎপাদন বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়, বরং বাজার ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন খাতে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
এদিকে, কলকাতার বাজারে দাম কমার আশায় অনেকেই অপেক্ষা করছেন। তবে কোলে বাজারের সঙ্গে অন্যান্য বাজারের মধ্যে যে বিশাল মূল্যবৈষম্য দেখা যাচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।