এ বছর ১৫ এপ্রিল ভারত সরকার বাংলাদেশে চাল (Rice Price) রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। খাদ্যশস্যের যোগান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত। দীর্ঘ প্রায় চার মাস ধরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। তবে ১২ অগস্ট হঠাৎ করেই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাংলাদেশে ভারতীয় চাল রপ্তানি শুরু হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ইতিমধ্যেই প্রায় পাঁচ লক্ষ টন চাল বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারও এ সময় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ভারত থেকে আমদানি করা চালের(Rice Price) উপর ইমপোর্ট ডিউটি বা আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই— দেশীয় বাজারে লাগামছাড়া চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা। কারণ বাংলাদেশে বিগত কয়েক মাস ধরে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য বড় সমস্যা হয়ে উঠেছিল। আমদানি শুল্ক মকুব করার ফলে ভারতীয় চাল সস্তায় বাংলাদেশি বাজারে পৌঁছতে শুরু করে।
কিন্তু এই রপ্তানির প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের পূর্বাঞ্চলের বাজারে। বিশেষত কলকাতার পাইকারি ও খুচরো বাজারে চালের দাম(Rice Price) হঠাৎ করে লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ী মহলের দাবি, গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৫ টাকা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যে মিনিকেট চাল কয়েক দিন আগে ৪৫ টাকায় মিলত, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। একইভাবে সিদ্ধ চাল, গোবিন্দভোগ বা স্বল্পমূল্যের চালেও বৃদ্ধি চোখে পড়ছে।
কলকাতার এক খুচরো ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, “দাম বাড়ার(Rice Price) পর অনেকেই সস্তার বিকল্প খুঁজছেন। আগে যারা নিয়মিত মিনিকেট কিনতেন, এখন তারা মাঝারি মানের অন্য চাল চাইছেন। আবার অনেকে কম দামে চাল কিনে অল্প অল্প করে চালাচ্ছেন সংসার।”
এভাবে বাজারে চালের (Rice Price) হঠাৎ দামবৃদ্ধি বাঙালি মধ্যবিত্তের জন্য বড়সড় চাপ তৈরি করেছে। কারণ চাল এ রাজ্যের প্রধান খাদ্যশস্য। প্রায় প্রতিটি পরিবারে প্রতিদিন চালের ব্যবহার অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে চালের চাহিদা সর্বাধিক। তাই দামের উত্থান সাধারণ মানুষের উপর তাত্ক্ষণিক প্রভাব ফেলে।
অনেক অর্থনীতিবিদও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, রপ্তানি যদি একই গতিতে চলতে থাকে তবে সামনের দিনগুলিতে বাংলার বাজারে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ বাজারের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রপ্তানির কারণে দেশীয় বাজারে সরবরাহ কমে যাচ্ছে, ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যে চাল বিক্রি করছেন।
এদিকে উৎসবের মরশুম সামনে। দুর্গাপুজো ঘনিয়ে আসছে। এই সময়ে বাঙালি গৃহস্থের খরচ বেড়ে যায়। বাজারে পোশাক, সোনার দাম, সবজি বা মাছ-মাংসের খরচের সঙ্গে যদি চালের দামও বাড়তে থাকে, তাহলে চাপ বহন করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে মধ্যবিত্তদের জন্য।
ভোক্তা মহলে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ তুলছেন— দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে নজর না দিয়েই সরকার রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, প্রতিবেশী দেশের সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে নিজেদের দেশের সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলা হচ্ছে। যদিও ব্যবসায়ী মহলের একাংশ মনে করছেন, রপ্তানি বন্ধ করলে কৃষকের ক্ষতি হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের চালের চাহিদা (Rice Price) প্রবল। তাই রপ্তানি অব্যাহত থাকলে কৃষকরা ভালো দাম পাবেন।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল। সরকারকে এখন ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। একদিকে কৃষকের স্বার্থ, অন্যদিকে ভোক্তার স্বস্তি— এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে নীতি গ্রহণ করাই একমাত্র পথ। না হলে আগামী দিনে বাংলার বাজারে চালের দাম যে আরও উর্ধ্বমুখী হবে, তা নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই।