হাই কোর্টে আরজি কর মামলার নতুন মোড়, বসাকের বেঞ্চে যাবে শুনানি

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নয়া মোড়। এই নৃশংস ঘটনায় গোটা রাজ্য ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে পথে…

rg-kar-case-takes-new-turn-hearing-likely-to-move-to-justice-basaks-bench-in-calcutta-high-court

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নয়া মোড়। এই নৃশংস ঘটনায় গোটা রাজ্য ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে পথে নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসক মহল— সকলেই। এই মামলায় তদন্ত নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মৃত তরুণীর পরিবার। তাঁদের দাবি, তদন্তে একাধিক ফাঁক রয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে তদন্ত শুরু করা এবং সেই তদন্তে আদালতের প্রত্যক্ষ নজরদারি প্রয়োজন।

সেই কারণেই নির্যাতিতার পরিবার আবারও কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল। পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, ঘটনার গুরুত্ব এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার জটিলতার কথা মাথায় রেখে কেবলমাত্র সিবিআইয়ের হাতে দায়িত্ব দেওয়া যথেষ্ট নয়, বরং আদালতের একটি বিশেষ বেঞ্চের তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।

   

মামলার শুনানি ডিভিশন বেঞ্চে হতে পারে

শুক্রবার হাই কোর্ট সূত্রে খবর, মৃতার পরিবারের নতুন আবেদনের নথি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে সেই সিঙ্গল বেঞ্চ নথিটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, যেহেতু ইতিমধ্যেই সিবিআই এবং সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্তদের তরফ থেকেও নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সেই মামলাগুলি বর্তমানে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের নেতৃত্বাধীন একটি ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলছে, তাই একই ধরনের আরেকটি মামলার শুনানি আলাদা সিঙ্গল বেঞ্চে হলে তা জটিলতা তৈরি করতে পারে।

ফলত, বিচারপতি ঘোষের বেঞ্চ মনে করেছেন, এই মামলার শুনানি হওয়া উচিত ডিভিশন বেঞ্চেই। সেক্ষেত্রে মৃতার পরিবারের আবেদনও বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চেই উঠতে পারে।

কেন নতুন করে তদন্ত দাবি?

পরিবারের অভিযোগ, প্রথম দিকে পুলিশের তদন্তে একাধিক ত্রুটি রয়ে গিয়েছিল। প্রমাণ লোপাট, অভিযুক্তদের রাজনৈতিক প্রভাব, এবং তদন্তে বিলম্ব— সব মিলিয়ে ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আদালতের তত্ত্বাবধান ছাড়া নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়, এমনটাই মনে করছেন পরিবারের আইনজীবীরা।

Advertisements

আইনজীবীদের বক্তব্য, এত বড় একটি মামলায় জনগণের আস্থা টিকিয়ে রাখা জরুরি। আর সে জন্যই আদালতের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অপরিহার্য। আদালতের নজরদারি না থাকলে তদন্তে গাফিলতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

রাজ্যের চিকিৎসক মহল ও নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর থেকেই চিকিৎসক মহল সরব হয়েছিলেন। হাসপাতাল চত্বর থেকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে সহকর্মীদের। তাঁদের দাবি ছিল, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি অভিযুক্তদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নাগরিক সমাজও বারবার প্রশ্ন তুলেছে, এত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও কেন তদন্তের গতি এত ধীর।

মৃতার পরিবার ও চিকিৎসক মহলের আন্দোলনের চাপেই মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পরিবারের দাবি, শুধুমাত্র সিবিআই তদন্তই যথেষ্ট নয়— আদালতের কঠোর তদারকির প্রয়োজন।

সামনে কী হতে পারে?

হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি নথি গ্রহণ করার পর মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে উঠতে পারে। যদি সত্যিই বিচারপতি দেবাংশু বসাকের বেঞ্চে শুনানি হয়, তবে সিবিআই ও সাজাপ্রাপ্তদের দাখিল করা মামলার সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে এই মামলাটিও শোনা হতে পারে। এতে তদন্তের গতি যেমন বাড়তে পারে, তেমনই একইসঙ্গে সমস্ত দিক আদালতের তত্ত্বাবধানে থাকার ফলে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।