বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং এর ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব ভারতেও গভীরভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের তাপমাত্রা (Second Warmest November In India) ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণতম অবস্থায় পৌঁছেছে। যা শুধু আবহাওয়ার অবস্থা নয়, পরিবেশ, কৃষি, জনস্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের অস্বাভাবিক আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও ঘনঘন হতে পারে এবং এর প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সীমান্ত শান্তিচুক্তির পর উন্নতির পথে এগোচ্ছে ভারত-চীনের সম্পর্ক, জানালেন জয়শংকর
কৃষির ওপর তাপমাত্রার প্রভাব
ভারত কৃষিনির্ভর দেশ এবং এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো কৃষির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। নভেম্বরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টির অভাব কৃষির জন্য বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং শীতকালীন আবহাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবারের নভেম্বর মাসে যেমন বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ছিল, তেমনি তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি কৃষিতে সঙ্কট তৈরি করতে পারে।
বিশেষ করে ধান, গম, মিষ্টি আলু, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বিপর্যস্ত হতে পারে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি এবং বৃষ্টির অনিয়মিত প্রবাহ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এই পরিস্থিতি ফসলের উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর ফলে খাদ্য সংকটও তৈরি হতে পারে যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলবে।
হেমতাবাদে বন্ধ হল প্রাচীন মিলন মেলা, মন খারাপ দুই বাংলার মানুষের
জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। শীতকালীন সময়ের দেরি এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধির ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড, এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে প্রচুর মানুষ গরমের কারণে অসুস্থ হতে পারে, বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক। এছাড়াও, দীর্ঘকালীন গরমের কারণে শরীরের জলীয় অংশের অভাব হতে পারে।
যা নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাপমাত্রার অতিরিক্ত বৃদ্ধি মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, ত্বকের রোগ, হার্টের সমস্যা, হিটস্ট্রোক এবং রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। এর পাশাপাশি, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বায়ুদূষণ এবং গ্যাসের নিঃসরণও বাড়তে পারে, যা মানুষের শ্বাসতন্ত্রের ওপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্যতিক্রমী সিঙ্গুর, কর্ম বিরতিতে সামিল হননি আলু ব্যবসায়ীরা
অবস্থানগত পরিবর্তন এবং পরিবেশের ক্ষতি
বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান পরিণতি হল গ্লেসিয়ার বা বরফ গলার হার বৃদ্ধি, যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভারতীয় হিমালয়ের গ্লেসিয়ারগুলো দ্রুত গলছে, যার ফলে নদীগুলোর পানির স্তর বেড়ে যেতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের পরিবর্তন দেশের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যকে বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে। নদীভাঙ্গন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি ও মানবসম্পদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে।
ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবিকা বিপন্ন হতে পারে এবং তারা সেখান থেকে উদ্বাস্তি হয়ে যেতে পারে। সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বৃহস্পতিতে কলকাতায় সনাতনী-সভা, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি হাই কোর্টের
এটা মোকাবিলার উপায়
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং এর উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য দেশের সরকার এবং জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
১. পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎসে বিনিয়োগ – নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস যেমন সূর্য, বায়ু, জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। এই উদ্যোগটি শুধু পরিবেশ সুরক্ষা করবে না বরং শক্তির স্বয়ংসম্পূর্ণতাও নিশ্চিত করবে।
২. কৃষির উন্নয়ন – কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং জল ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদ্ধতির মাধ্যমে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ফসলের ক্ষতি কমানো সম্ভব। কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সেচ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করা দরকার।
৩. জলসম্পদ সংরক্ষণ – বৃষ্টিপাতের ঘাটতি পূরণে জলসংরক্ষণ প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব বাড়ানো প্রয়োজন। ট্যাংক, বৃষ্টির জল সংগ্রহের ব্যবস্থা এবং ড্রিপ সেচের মতো আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা – তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জনস্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের পরিকাঠামো উন্নত করা এবং জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধি আমাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলছে। বিশেষত, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করার জন্য এখনই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই চ্যালেঞ্জ আরও বড়। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই সংকট মোকাবিলা করতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হব।
Second Warmest November In India: Global warming and the resulting climate change have become major issues worldwide, with their effects deeply felt in India as well. In November 2024, India’s temperatures reached one of the hottest levels in history. This abnormal weather has significant impacts not only on the climate but also on the environment, agriculture, public health, and overall living conditions. Climate change is likely to cause such extreme weather events more frequently, highlighting the need for effective measures to address its impact. https://ekolkata24.com/