পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তাল চাকরিহারাদের আন্দোলন

রাজ্যের চাকরিহারাদের আন্দোলন আবারও চরমে উঠল। সোমবার সকালে সল্টলেকে অবস্থিত এসএসসি (SSC) ভবনের দিকে অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়…

Protests by unemployed people erupt in clashes with police

রাজ্যের চাকরিহারাদের আন্দোলন আবারও চরমে উঠল। সোমবার সকালে সল্টলেকে অবস্থিত এসএসসি (SSC) ভবনের দিকে অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা, দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরতে এবং সরাসরি এসএসসি (SSC) কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে তাঁরা ভবনের দিকে মিছিল করে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু পথের মধ্যেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পুলিশ সূত্রে খবর, অনুমতি ছাড়া এসএসসি (SSC) ভবনের দিকে মিছিল করে এগোনোর চেষ্টা করছিল চাকরিহারারা। তাঁদের আটকাতে গেলে শুরু হয় প্রবল ধস্তাধস্তি। উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। একাধিক জায়গায় চাকরিহারী যুবক-যুবতীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি এবং হাতাহাতির দৃশ্য ধরা পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

   

চাকরিহারীদের বক্তব্য, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, বহু বছর ধরে নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলেও যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না। উপরন্তু, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। তাই প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা এসএসসি ভবনে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পুলিশ বিনা কারণে বাধা দিয়েছে এবং কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। তাঁদের অভিযোগ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের কণ্ঠ রোধ করছে।

অন্যদিকে, পুলিশের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুমতি ছাড়াই বিক্ষোভকারীরা এসএসসি ভবনের দিকে রওনা দিয়েছিলেন। এর ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। পুলিশের বক্তব্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই কিছু বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের প্রশ্ন নেই।

চাকরিহারী (SSC) সংগঠনের এক নেত্রী জানিয়েছেন, “আমরা বহু বছর ধরে পথে লড়াই করছি। দুর্নীতিগ্রস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে যোগ্য প্রার্থীরা কাজ পাচ্ছেন না। আমরা চরম হতাশায় ভুগছি। সরকারের কাছে আবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই শেষ উপায় হিসেবে আজ এসএসসি ভবনের দিকে মিছিল করেছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিল।”

Advertisements

অন্যদিকে সাধারণ মানুষেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এদিন। সকাল থেকেই সল্টলেকের কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচলে প্রভাব পড়ে। অফিসযাত্রী এবং পড়ুয়াদের বিপাকে পড়তে হয়। হঠাৎ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় ভিড় জমে যায় আশপাশের এলাকায়।

রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরিহারাদের কণ্ঠরোধ করছে। তাদের বক্তব্য, গণতান্ত্রিক দেশে দাবি-দাওয়া জানাতে আন্দোলন করা মানুষের অধিকার। সরকার এবং প্রশাসন সেই অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তবে শাসক দলের নেতাদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা করলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

দিন যত যাচ্ছে, চাকরিহারাদের ক্ষোভ আরও বাড়ছে। একদিকে মামলা চলছে আদালতে, অন্যদিকে পথে নেমে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বঞ্চিত যুবক-যুবতীরা। আজকের এই ঘটনাই প্রমাণ করল, সমস্যা মেটার বদলে জটিলতা আরও বাড়ছে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, গ্রেপ্তার এবং বিক্ষোভ—সব মিলিয়ে আগামী দিনে আন্দোলন আরও তীব্র হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে।