মঙ্গলবার সকাল থেকেই করুণাময়ী চত্বরে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সাক্ষী থাকল সল্টলেক। নিয়োগের দাবিতে আবারও রাজপথে নামলেন ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণ (SSC Protest) চাকরিপ্রার্থীরা। বহুদিন ধরে চলা এই আন্দোলন এদিন ফের রূপ নিল ধুন্ধুমার পরিস্থিতিতে। শান্তিপূর্ণ জমায়েত দিয়েই শুরু হয়েছিল তাঁদের কর্মসূচি, কিন্তু পুলিশি হস্তক্ষেপে মুহূর্তের মধ্যেই তা পরিণত হয় বিশৃঙ্খলায়।
সকাল থেকেই শত শত চাকরিপ্রার্থী (SSC Protest) করুণাময়ীতে জমায়েত হতে থাকেন। হাতে প্ল্যাকার্ড, গলায় স্লোগান, কণ্ঠে প্রতিবাদের আহ্বান—সব মিলিয়ে চত্বর ভরে ওঠে আন্দোলনের আবহে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা ২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অথচ এতদিন কেটে গেলেও নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এর ফলে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ঘেরা। অনেকেই বয়সসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন, অনেকের আবার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্দোলনকারীদের (SSC Protest) বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ এবং সরকারি প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বারবার স্থগিত রাখা হচ্ছে। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে পর্ষদের সামনে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশি হস্তক্ষেপে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। অভিযোগ, জমায়েত শুরু হতেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের জোর করে সেখান থেকে সরাতে চায়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।
চোখের সামনে ধরা পড়ে এক চাঞ্চল্যকর দৃশ্য—চাকরিপ্রার্থীদের (SSC Protest) চ্যাংদোলা করে পুলিশি ভ্যানে তোলা হচ্ছে। অনেকেই প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধাক্কা খান। এরই মধ্যে বিশৃঙ্খলার মাঝে কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। উত্তপ্ত রোদে এবং দীর্ঘসময় ধরে বিক্ষোভ চালানোর কারণে কেউ কেউ রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীরা তাঁদের জলে ভিজিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন।
এদিন করুণাময়ী মোড়ে যানচলাচলও ব্যাহত হয়। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভিড়ে রাস্তাজুড়ে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। অফিসগামী মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েন। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদের লড়াই শুধুমাত্র নিজেদের চাকরির জন্য নয়, বরং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্যও।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে উত্তাল পরিস্থিতি চলছে। একদিকে আদালতের একাধিক নির্দেশ, অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগে স্থগিত নিয়োগ প্রক্রিয়া—সব মিলিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে। টেট উত্তীর্ণদের দাবি, তাঁরা পরিশ্রম করে যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। এখন আর অপেক্ষা নয়, অবিলম্বে নিয়োগ শুরু করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের এক প্রতিনিধি জানান, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলাম। আমাদের দাবিটা একটাই—যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ। কিন্তু পুলিশ অকারণে আমাদের উপর হামলা চালাল। অনেক সহপাঠী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।”
অন্য এক চাকরিপ্রার্থী(SSC Protest) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “২০২২ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তিন বছর কেটে গেল। এখনো নিয়োগ হল না। সরকার শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা আর অপেক্ষা করতে রাজি নই।”
পুলিশ সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, আন্দোলনকারীরা(SSC Protest) অনুমতি ছাড়া রাস্তায় জমায়েত করেছিলেন। এর ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছিল। তাই তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে চাকরিপ্রার্থীরা পুলিশের এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, “যতক্ষণ নিয়োগ না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।”
করুণাময়ীতে এদিনের এই আন্দোলন ফের রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। তাঁদের দাবি, শিক্ষক নিয়োগে একের পর এক দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে সরকার প্রক্রিয়া বিলম্ব করছে। অন্যদিকে সরকার বারবার আশ্বাস দিয়েছে, আদালতের নির্দেশ মেনেই নিয়োগ হবে।
কিন্তু বাস্তবে নিয়োগের আলো এখনো দেখা যায়নি। আর সেই কারণেই উত্তাল হচ্ছে রাজপথ। ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা পিছু হঠবেন না। প্রয়োজনে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, যতদিন না তাঁদের ন্যায্য দাবি পূরণ হচ্ছে।
করুণাময়ীর এদিনের দৃশ্য যেন আবারও প্রমাণ করল—চাকরি প্রার্থীদের ক্ষোভ এখন বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে। সরকারের আশ্বাসে আর ভরসা নেই তাঁদের। একটাই দাবি—“অবিলম্বে নিয়োগ চাই, অন্য কিছু নয়।”