রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তেজনা তৈরি করেছে নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhijan) ঘিরে নতুন বিতর্ক। বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দাকে তলব করেছে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ, নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশের উদ্দেশে কটূক্তি ও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনার তদন্তের জন্য আগামী ১৭ অগস্ট নিউ মার্কেট থানায় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু অশোক দিন্দাই নন, আরও কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করা, পুলিশকে প্ররোচনা দেওয়া, হুমকি দেওয়া এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের দাবি, নবান্ন অভিযানের দিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পিছনে এই ধরনের মন্তব্য ও আচরণই দায়ী।
ঘটনাবলি
গত ৯ অগস্ট, নবান্ন অভিযানের(Nabanna Abhijan) দিন থেকেই পরিস্থিতি তীব্র রূপ নেয়। ওই দিন ছিল আরজিকর কাণ্ডের এক বছর পূর্তি। ন্যায়বিচারের দাবিতে নিহত রোগীর বাবা-মা-সহ বহু মানুষ এই অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিজেপির বহু নেতা, কর্মী ও বিধায়ক। পতাকা হাতে শোভাযাত্রা এগোতে থাকে, কিন্তু পার্কস্ট্রিট এলাকায় এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীরা অনুমতি ছাড়াই পথ অবরোধ করে এবং প্রশাসনের নির্দেশ না মেনে মিছিল চালাতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করতে হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তীব্র বাগ্যুদ্ধ হয় কয়েকজন বিজেপি নেতার, যার মধ্যে অশোক দিন্দার নাম বিশেষভাবে উঠে এসেছে। অভিযোগ, তিনি শুধু কটূক্তিই করেননি, বরং পুলিশের উদ্দেশে হুমকিও দিয়েছিলেন।
পুলিশের পদক্ষেপ
ঘটনার(Nabanna Abhijan) পর থেকেই গোটা বিষয়টি নজরে রেখেছিল কলকাতা পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ, সংবাদমাধ্যমের কভারেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ঘটনার প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। এরপরই নিউ মার্কেট থানায় একটি মামলা দায়ের হয় অশোক দিন্দা-সহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে।
পুলিশের অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে—
কটূক্তি ও হুমকি দেওয়া
সরকারি কাজে বাধা প্রদান
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য
জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা
এরপর অশোক দিন্দাকে ১৭ অগস্ট হাজিরার নির্দেশ পাঠানো হয়। পুলিশের দাবি, সেদিন তিনি উপস্থিত থেকে নিজের বক্তব্য জানাবেন এবং তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলেই আশা।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁদের বক্তব্য, “নবান্ন অভিযানে পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিল। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে জোর করে দমন করা হয়েছে।” বিজেপির অভিযোগ, উল্টে তাঁদের নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
পুলিশের পরিবারও পথে
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এক ভিন্ন দৃশ্য দেখা যাবে কলকাতায়। পুলিশ পরিবারের মহিলা সদস্যরা সাংবাদিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা জানাবেন, নবান্ন অভিযানে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাঁদের চিকিৎসা চলছে। বৈঠক শেষে তাঁরা মিছিল করে গান্ধীমূর্তির সামনে গিয়ে প্রতিবাদ জানাবেন।
রাজনৈতিক উত্তেজনা
নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে আগেও রাজনৈতিক চাপানউতোর দেখা গিয়েছে। তবে এবার কটূক্তি ও হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগে বিধায়ককে তলব করা নতুন মোড় এনে দিয়েছে ঘটনায়। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা—১৭ অগস্ট অশোক দিন্দার হাজিরা ঘিরে আদালত ও রাজপথ—দুই জায়গাতেই উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।
রাজনীতির মাঠে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি এবং রাজ্যের শাসকদল উভয়েই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছে। শেষ পর্যন্ত তদন্ত কোন পথে এগোয়, এবং এই মামলার পরিণতি কী হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।