মোদীর সভা সত্ত্বেও ২০২৬ ভোটে সন্দেহে বঙ্গ বিজেপি

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট এখনও অনেকটা দেরি। কিন্তু তার আগে থেকেই বাংলায় কার্যত নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত লোকসভা ভোটে…

PM Modi on National Space Day

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোট এখনও অনেকটা দেরি। কিন্তু তার আগে থেকেই বাংলায় কার্যত নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত লোকসভা ভোটে (Assembly Polls) আশানুরূপ ফল না হলেও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব ফের প্রধানমন্ত্রীর সভাকেই ভোট জয়ের বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে দলের ভেতরেই এখন প্রশ্ন উঠছে, মোদীর প্রচারসভা দিয়ে আদৌ ভোটবাক্সে লাভবান হতে পারবে কি বিজেপি?

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৩টি জনসভা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ফলের হিসেবে দেখা যায়, বিজেপি রাজ্যে মাত্র ৭টি আসনে জিতেছিল, যার মধ্যে পাঁচটি উত্তরবঙ্গের। দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির সাফল্য ছিল সীমিত—শুধু পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুরে জয় এসেছিল। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, যেখানে মোদি সভা করেছিলেন, সেখানেও হেরেছিল বিজেপি। দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমান-দুর্গাপুর, কৃষ্ণনগর, বোলপুর, হাওড়া, আরামবাগ, হুগলি, বারাকপুর, বারাসত, ঝাড়গ্রাম, যাদবপুর ও মথুরাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভার পরও একটিও আসন পায়নি বিজেপি। এই তথ্য বিজেপি সংগঠনের ভেতরে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

   

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সবচেয়ে বড় সাফল্যের রাজ্য হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের লক্ষ্য ছিল বাংলায় আসন বৃদ্ধি করা। মোদী প্রথমে উত্তর কলকাতায় একটি রোড শো করেও ভোট প্রচারের ঝাঁঝ বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষমেষ বিজেপির আসন সংখ্যা কমে যাওয়ায় রাজ্যের বিজেপি শিবিরে হতাশা তৈরি হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুধু মোদির সভা দিয়ে বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রচারনির্ভর কৌশল নিয়ে রাজ্যের ভোটযুদ্ধে সাফল্য আসবে না, বরং সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো এবং গ্রামীণ ভোটারদের কাছে পৌঁছনো দরকার।

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবারও একই রণকৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার থেকে প্রধানমন্ত্রীর সভা শুরু হয়েছে। দুর্গাপুর ও দমদমেও সভা করেছেন তিনি। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, ভোটের আগে আরও ২৫ থেকে ৩০টি সভার পরিকল্পনা রয়েছে। বিজেপি রাজ্য নেতারা মনে করছেন, মোদির জনপ্রিয়তা কিছু ভোটার টানলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা, আদি-নব্য কোন্দল এবং স্থানীয় নেতৃত্বের অভাব বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisements

এক রাজ্য বিজেপি নেতার কথায়, “দলের নিচুতলায় সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। অনেক জেলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ময়দানে দাঁড়ানোর মতো কার্যকরী সংগঠন নেই। মোদিজিকে মুখ করে যতই সভা করা হোক, বাস্তবিক পরিস্থিতি পাল্টানো কঠিন।”

রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বড়সড় উত্থান ঘটিয়েছিল, কিন্তু সংগঠনের ভেতরের বিভাজন এবং মাটির সঙ্গে যোগের অভাব ভোটে বড় প্রভাব ফেলেছে। এখন বিজেপির চ্যালেঞ্জ, মোদির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে স্থানীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা যায় এবং ভোটারদের আস্থা ফেরানো যায়।

সব মিলিয়ে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে সংগঠনের পুনর্গঠন এবং প্রার্থীপদ বাছাইয়ের ওপর। মোদির প্রচার অবশ্যই রাজনৈতিক উন্মাদনা তৈরি করবে, কিন্তু বাস্তবে কতটা ভোটে রূপান্তরিত হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।