‘উন্নয়নের নামে দুর্নীতি’, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মোদি

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন রাজ্য সফর ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই দুর্গাপুরে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে…

Major Cabinet Reshuffle Likely in PM Modi's Government, Buzz Grows in Delhi

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন রাজ্য সফর ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই দুর্গাপুরে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এই সফরকে কেন্দ্র করে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই এখন জল্পনা, উত্তেজনা এবং খানিকটা সংশয়। বিশেষ করে জনসভা ঘিরে সাংগঠনিক স্তরে একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে, যা কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।

দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভা মানেই সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু এই সভার আগে থেকেই দলের অন্দরে দেখা দিয়েছে মঞ্চ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব। রাজ্যের একাধিক শীর্ষ নেতা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন কি না, কারা সামনে বসার জায়গা পাবেন— এসব নিয়েই তৈরি হয়েছে দোটানা। বিশেষ করে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি নিয়ে টানাপড়েন চলেছে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ হলেও সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতির নানা ইস্যুতে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই সভায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

   

যদিও এই অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলিকে সরিয়ে রেখে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী নিজেই। দুর্গাপুরে সভার আগে সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট করে তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেছেন তিনি। রাজ্যে “অপশাসন”, “দুর্নীতি”, এবং “জনবিরোধী নীতি” নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃণমূলকে জবাবদিহি করার জন্য চেপে ধরেছেন। এমনকি রাজ্যের ‘অপরাধ ঢাকতে’ তৃণমূল যেভাবে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে, তাও তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাংলার মানুষ সুশাসন চায়, কিন্তু তৃণমূল সরকার তা দিতে ব্যর্থ। তারা শুধু আত্মীয়পোষণ ও সিন্ডিকেট চালানো নিয়ে ব্যস্ত।’’

বঙ্গ সফরের আগে এই কৌশলী আক্রমণ মোদীর রাজনৈতিক পরিকল্পনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল ধরা হচ্ছে এই সফরকে। বাংলায় আসন সংখ্যা বাড়ানো বিজেপির কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই লড়াইয়ে কর্মীদের মনোবল বাড়ানো এবং জনমতের দিকে প্রভাব ফেলা— দু’টিই মোদীর এই সফরের উদ্দেশ্য।

Advertisements

রাজ্য বিজেপির একাংশ মনে করছেন, দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হলেও, এই সফরকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য না মিটলে লাভবান হবে তৃণমূলই। তাই নেতাদের ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা দূরে সরিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচারেই জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক জেলা নেতৃত্ব।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক মহল বলছে, মোদী চাইছেন, সভা থেকেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বার্তা দিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে। তৃণমূল যদিও ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষকে ‘ভোটের আগে নাটক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দলের এক মুখপাত্রের কথায়, “যে সরকার ডবল ইঞ্জিন চালিয়ে দেশের অর্থনীতি ডুবিয়েছে, তারা বাংলাকে কী শিখাবে?”

সব মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বঙ্গ বিজেপির ভেতরের টানাপড়েন, জনসভার প্রস্তুতি, ও সোশাল মিডিয়ায় মোদীর আক্রমণ— সবটাই জোরদার রাজনৈতিক যুদ্ধের পূর্বাভাস দিচ্ছে। এখন দেখার, দুর্গাপুরের মঞ্চ থেকে মোদী ঠিক কী বার্তা দেন, আর তার প্রভাব কতটা পড়ে রাজ্যের ভোট ময়দানে।