নতুন ওবিসি তালিকার স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা হাইকোর্টে, শুনানি মঙ্গলে

পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) তালিকা নিয়ে বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজ্য সরকারের নতুন ওবিসি তালিকার বৈধতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে (high-court) দায়ের হওয়া একটি…

high-court stay order in obc list

পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) তালিকা নিয়ে বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজ্য সরকারের নতুন ওবিসি তালিকার বৈধতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে (high-court) দায়ের হওয়া একটি মামলার শুনানি মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

এই মামলায় রাজ্যের নতুন তালিকার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের (high-court) পূর্ববর্তী রায় অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে এই শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

   

প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের (high-court) বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায়ে ২০১০ সালের পর থেকে জারি করা প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, এই শংসাপত্রগুলি যথাযথ সমীক্ষা ও আইনি প্রক্রিয়া মেনে জারি করা হয়নি।

বিশেষত, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ প্রদানের অভিযোগ উঠেছিল, যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হয়। এই রায়ের ফলে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা গ্রহণকারী বহু মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

রাজ্য সরকার (high-court) এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। তবে, সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে এবং রাজ্যকে নতুন করে সমীক্ষা চালিয়ে ওবিসি তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ মেনে রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনের মাধ্যমে একটি নতুন সমীক্ষা শুরু করে।

২০২৫ সালের ২ জুন রাজ্য মন্ত্রিসভা এই সমীক্ষার ভিত্তিতে একটি সংশোধিত ওবিসি তালিকা অনুমোদন করে, যাতে ১৪০টি জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই তালিকায় পূর্বের ৬৬টি জাতির মধ্যে ২টি বাদ দিয়ে ৬৪টি রাখা হয় এবং নতুন করে ৭৬টি জাতি যুক্ত করা হয়।

নতুন তালিকা নিয়ে বিতর্ক (high-court)

নতুন ওবিসি তালিকা প্রকাশের পর থেকেই এটি তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজ্য সরকার দাবি করেছে, এই তালিকা সম্পূর্ণরূপে আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে, এবং ধর্মের কোনো ভূমিকা এতে নেই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (high-court) বিধানসভায় বলেন, “আমরা কোনো ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দিইনি। এই তালিকা সম্পূর্ণ সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি।” তিনি আরও জানান, বর্তমানে ওবিসি বিভাগে ৪৯টি ওবিসি ‘এ’ এবং ৯১টি ওবিসি ‘বি’ শ্রেণি রয়েছে, এবং আরও ৫০টি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমীক্ষা চলছে।

কিন্তু বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই তালিকাকে ‘ধর্মভিত্তিক ভোটব্যাঙ্ক’ তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে সমালোচনা করেছে। বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি এবং নামমাত্র সমীক্ষার মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশ করেছে, যা হাইকোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশের পরিপন্থী।

বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “এই তালিকা প্রকৃত ওবিসি সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষা করছে না। রাজ্য সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে এই তালিকা তৈরি করেছে।” তিনি সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার কথাও জানান।

Advertisements

হাইকোর্টে নতুন মামলা

নতুন ওবিসি তালিকার বৈধতা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে নতুন করে মামলা দায়ের করেছেন অমলচন্দ্র দাস। তিনি পূর্বে ২০২৪ সালে ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের মামলায় জয়ী হয়েছিলেন(high-court)। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নতুন তালিকা ত্রুটিপূর্ণ সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি হাইকোর্টের ২০২৪ সালের রায়ের পরিপন্থী। এই মামলায় রাজ্য সরকার, পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন এবং অমলচন্দ্র দাস বিবাদী পক্ষ হিসেবে রয়েছেন।

এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “হাইকোর্টে ফের ওবিসি মামলা(high-court)। রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্যের অভিযোগ। নামমাত্র সমীক্ষা করে তড়িঘড়ি তালিকা প্রকাশের অভিযোগ। নতুন তালিকা প্রকাশ নিয়ে বিরক্ত আদালতও। আগামীকাল দুপুর ২টায় ফের শুনানি।” এই পোস্ট থেকে বোঝা যায়, আদালত নতুন তালিকার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।

আইনি ও রাজনৈতিক প্রভাব

এই মামলার ফলাফল রাজ্যের ওবিসি সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। ২০১০ সালের আগে রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ ছিল ৭ শতাংশ, যা পরে বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের পর এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা জটিলতার মুখে পড়েছে। বিশেষত, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে ওবিসি প্রার্থীদের জন্য নতুন তালিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সুপ্রিম কোর্টে (high-court) এই বিষয়ে মূল মামলার শুনানি চলছে, যার পরবর্তী শুনানি জুলাই মাসে নির্ধারিত। বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চে এই শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া উচিত নয়। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল জানিয়েছেন, নতুন সমীক্ষা আর্থিক ও সামাজিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে করা হয়েছে।

ইংল্যান্ড সফরে রেকর্ড গড়ার দৌড়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররা

সমাজ ও রাজনীতিতে প্রভাব

নতুন ওবিসি (high-court) তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে। বিজেপি দাবি করছে, তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক তৈরির জন্য এই তালিকা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, এই তালিকা সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য তৈরি। বিধানসভায় এই বিষয়ে বিতর্কের সময় বিজেপি বিধায়করা সেশন থেকে ওয়াকআউট করেন, অভিযোগ করে যে তাদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

সামাজিকভাবে, এই তালিকা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলবে। যারা ওবিসি সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে চাকরি বা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের জন্য এই বিতর্ক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, নতুন তালিকা বাতিল হলে তাদের সুযোগ কমে যাবে।

মঙ্গলবারের শুনানি রাজ্যের ওবিসি সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। হাইকোর্ট (high-court) যদি নতুন তালিকার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়, তবে রাজ্য সরকারের জন্য এটি বড় ধাক্কা হবে। অন্যদিকে, তালিকা বহাল থাকলে সংরক্ষণ নীতি আরও সুসংহত হবে। এই মামলা শুধু আইনি লড়াই নয়, বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্ধারণ করবে। সকলের দৃষ্টি এখন কলকাতা হাইকোর্টের দিকে।