পার্থর জামিন মামলার শুনানি আজ হাই কোর্টে, মিলবে মুক্তি!

আজ কলকাতা হাই কোর্টে (High Court) রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) সহ শিক্ষা দফতরের পাঁচ কর্মকর্তার জামিনের (bail) মামলার শুনানি (hearing) হতে চলেছে।…

Partha Chatterjee high court

আজ কলকাতা হাই কোর্টে (High Court) রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) সহ শিক্ষা দফতরের পাঁচ কর্মকর্তার জামিনের (bail) মামলার শুনানি (hearing) হতে চলেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি, যেখানে সিবিআইয়ের আইনজীবী সওয়াল করার কথা রয়েছে। মামলাটি বর্তমানে হাই কোর্টের (High Court) তৃতীয় বেঞ্চে চলছে, এবং এর আগে দু’বার এই মামলার শুনানি হয়েছিল। কিন্তু গত শুনানিতে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এক মতানৈক্য দেখা দেয়। ফলে, এই মামলাটি তৃতীয় বেঞ্চে স্থানান্তরিত হয় এবং আজকের শুনানি তৃতীয় বেঞ্চেই অনুষ্ঠিত হবে।

রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) বিরুদ্ধে চলতি বছরের শুরুতেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলার পেছনে ছিল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সহকর্মী পাঁচ কর্মকর্তার সম্পর্ক এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ। সিবিআই এই মামলায় তদন্ত শুরু করে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়সহ পাঁচজন শিক্ষা দফতরের কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারির পর, তাঁরা হাই কোর্টে (High Court) জামিনের জন্য আবেদন করেন, যা এখন শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

   

প্রসঙ্গত, এই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অবৈধভাবে চাকরির নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনৈতিক কাজ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, তাঁরা নির্দিষ্ট যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত স্বার্থে একাধিক চাকরি প্রার্থীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে সিবিআই। সেক্ষেত্রে, অভিযুক্তদের জামিন নিয়ে আদালতকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করতে হবে।

এই মামলার শুনানির একাংশ ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) জামিনে মুক্তি দাবি। আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেও কখনও কোন অপরাধে দোষী হননি এবং তিনি শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন, তবে জামিনের আবেদন করেছেন। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে কিন্তু এই জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে, কারণ তাদের বক্তব্য, অভিযুক্তদের জামিন দিলে, তারা তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে পারেন বা প্রমাণ লোপাট করতে পারেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলার রায়ের ক্ষেত্রে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। এই কারণে, মামলাটি তৃতীয় বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তৃতীয় বেঞ্চের বিচারকরা আজ শুনানির পর মামলার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

যদিও মামলাটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তবুও আদালতের পক্ষ থেকে সুবিচারের জন্য আদালতকে তাদের কাজ করতে হতে পারে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন নিয়ে আদালত তার সিদ্ধান্ত জানালে, তা রাজ্যের রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিসরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিশেষত, সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী দল এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, তা এই জামিন মামলার ফলাফলকেও প্রভাবিত করতে পারে।

অপরদিকে, এই মামলা শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) জন্য নয়, রাজ্যের শিক্ষা দফতরের অন্য পাঁচ কর্মকর্তার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের জন্য একটা বড় ধরনের বার্তা হতে পারে। যদি এই মামলার রায় জামিনে খারিজ হয়, তবে তা রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে।

এদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) জামিনের ব্যাপারে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কিছুটা আশাবাদী। তাদের বক্তব্য, এই জামিন মামলা একটি আইনি প্রক্রিয়া, এবং আদালত তার সিদ্ধান্ত নিজস্ব বিবেচনায় নেবে। তবে রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো রয়েছে, যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিনে মুক্তি পান, তাহলে তা ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তৃণমূলের জন্য একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সাফল্য হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, আজকের শুনানি রাজ্যের রাজনীতির পাশাপাশি সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক এবং সরকারের অবস্থানকেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করবে। আদালতের সিদ্ধান্তে কি হবে, সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ, তবে সবার নজর থাকবে ওই মামলার ফলাফলের দিকে। যদি আদালত জামিন মঞ্জুর করে, তবে তা রাজ্যের শিক্ষা দফতরের চলমান পরিস্থিতিকে নতুন করে আলোচনার মধ্যে নিয়ে আসবে।

অতএব, আজকের শুনানি শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং তার সহকর্মীদের জন্য নয়, রাজ্য সরকার এবং আদালতের সিদ্ধান্তের উপরও গোটা রাজ্যের নজর থাকবে।