পুলিশ লাঠিচার্জে উত্তাল পার্ক স্ট্রিট, রাস্তায় বসলেন শুভেন্দু

কলকাতা: শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) নবান্ন অভিযানের ডাক ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা পার্ক স্ট্রিট। সকাল থেকেই বিরোধী শিবির, বিশেষত বিজেপি কর্মী–সমর্থক…

suvendu slams police

কলকাতা: শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) নবান্ন অভিযানের ডাক ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠল শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা পার্ক স্ট্রিট। সকাল থেকেই বিরোধী শিবির, বিশেষত বিজেপি কর্মী–সমর্থক ও বিধায়করা বিধানসভা থেকে মিছিলের আকারে নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) নেতৃত্বে এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল, বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, অশোক দিন্দা-সহ একাধিক জনপ্রতিনিধি।

শুভেন্দু অধিকারী আগে থেকেই ঘোষণা করেছিলেন— তাঁকে যেখানে আটকানো হবে, সেখানেই তিনি রাস্তার উপরে বসে পড়বেন। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছিল কলকাতা পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশ। পার্ক স্ট্রিট মোড়ে পুলিশের একাধিক ব্যারিকেড বসানো হয়, যাতে মিছিল নবান্নের দিকে এগোতে না পারে।

   

প্রথমে বিধানসভা চত্বরে জড়ো হয়ে বিজেপি বিধায়কেরা পতাকা ছাড়াই মিছিল শুরু করেন। জহরলাল নেহরু রোড হয়ে পার্ক স্ট্রিটের দিকে এগোতেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় পার্ক স্ট্রিট মোড়।

সংঘর্ষের জেরে বহু বিজেপি কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “নির্যাতিতার বাবা-মাকে মারা হয়েছে, বিজেপি বিধায়কদের মারা হয়েছে, অন্তত একশো জন এখানেই আহত হয়েছেন। আমাকে পর্যন্ত মারা হয়েছে। বাংলা বনাম মমতার লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে।” তাঁর এই বক্তব্যের পর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা একাধিক দিক দিয়ে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন। প্রথমে জহরলাল নেহরু রোড হয়ে মিছিল এগোনোর চেষ্টা হয়, পরে পথ পরিবর্তন করে অন্য দিক দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু চারদিক থেকে ঘেরাও করা থাকায় মিছিল নবান্নের দিকে অগ্রসর হতে পারেনি।

ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের প্রস্তুতিও ছিল। সংঘর্ষের জেরে পার্ক স্ট্রিটের যান চলাচল একাধিকবার বন্ধ রাখতে হয়, ফলে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

Advertisements

এদিন শুধু পার্ক স্ট্রিট নয়, হাওড়া ময়দান, সাঁতরাগাছি এলাকাতেও নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। হাওড়া ব্রিজের দুই প্রান্তে কড়া নজরদারি চালায় পুলিশ, যাতে কোনোভাবেই বড় মিছিল নবান্নে পৌঁছতে না পারে।

শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় বসে বিক্ষোভে সামিল হন। তাঁদের ঘিরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। পরে পুলিশের অনুরোধে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, এই লড়াই চলবে এবং “জনগণের স্বার্থে নবান্ন পর্যন্ত তাঁদের পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে।”

রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনার পর শুরু হয়েছে চর্চা। শাসক শিবিরের অভিযোগ, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা করছে। পাল্টা বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য সরকার বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে পুলিশকে ব্যবহার করছে।

নবান্ন অভিযানের এই সংঘর্ষ ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বহু মানুষ পুলিশের কড়া ভূমিকার সমালোচনা করেছেন, আবার অনেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। রাজনৈতিক লড়াই যে আরও তীব্র হবে, তার ইঙ্গিত মিলেছে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে।