মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন শরিক সরকারের গর্বের প্রকল্প ছিল ‘লাড়কী বহীণ’। নির্বাচনের মুখে এই মহিলা-সহায়ক প্রকল্পকে সামনে রেখেই ভোট কৌশল সাজিয়েছিল রাজ্য বিজেপি। প্রতিশ্রুতি ছিল— গরিব মহিলাদের জন্য সরাসরি ব্যাঙ্কে মাসিক দেড় হাজার টাকার অনুদান। অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো। সেই কারণে তৃণমূল সরকার শুরু থেকেই এই প্রকল্পকে কটাক্ষ করে বলেছিল, “লক্ষ্মীর ভান্ডারের নকল”। তবে যাই হোক, নির্বাচনী ডিভিডেন্ড বিজেপি পেয়েছিল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই তুরুপের তাস এখন বিজেপি সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নারী ও শিশু উন্নয়ন দফতরের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ‘লাড়কী বহীণ’ প্রকল্পের অধীনে গত ১০ মাসে মোট ১৪ হাজার ২৯৮ জন পুরুষ মাসে দেড় হাজার টাকা করে অনুদান পেয়েছেন। যার ফলে সরকারের খরচ বেড়েছে ২১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা!
সমস্যার মূল উৎস অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায়। অভিযোগ, অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করার সময় এই পুরুষরা নিজেদের মহিলা হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। এভাবে প্রকল্পের লক্ষ্যচ্যুতি ঘটেছে। ভুয়ো পরিচয়ে সরকারি অনুদান আত্মসাৎ করার এই ঘটনা ঘিরে উঠেছে বড়সড় বিতর্ক।
এই বিষয়ে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার বলেন, “এই প্রকল্প তৈরি হয়েছিল গরিব মহিলাদের জন্য। সেখানে কীভাবে পুরুষরা সুবিধা পেল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এই টাকা আমরা ফিরিয়ে আনব এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে বিরোধীরা এখানেই থেমে নেই। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে কড়া ভাষায় বলেন, “এরা কীভাবে আবেদন করল? কে এদের সাহায্য করল? এই ঘটনার নেপথ্যে বড় ষড়যন্ত্র আছে। অবিলম্বে স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন।”
বাংলার তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেন বিজেপিকে। তিনি বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটা প্রথম করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন বিজেপি এটাকে অপমান করেছিল, ট্রোল করেছিল। পরে ওরা নিজেরা সেই ধারণা কপি করে নিজেদের রাজ্যে চালু করল। আর এখন সেই প্রকল্পে ১৪ হাজার পুরুষ মেয়েদের টাকার সুবিধা নিল!”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনার পরেও কি ওখানে সিবিআই হবে না? কেন কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন যাবে না মহারাষ্ট্রে? কেন কোনও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পাঠানো হবে না? বাংলায় হলে তো এখনই কেন্দ্রীয় এজেন্সি ঝাঁপিয়ে পড়ত!”
তৃণমূলের বক্তব্য, এই ঘটনা প্রমাণ করে বিজেপি শুধুই ভোটের সময় নারীদের নিয়ে ‘নাটক’ করে, প্রকৃত অর্থে তাদের সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে দায়হীন। অন্যদিকে, প্রশাসনিক স্তরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন প্রক্রিয়ায় এত বড় ফাঁকফোকর রইল কীভাবে? কারা এই কারচুপিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত?
এই ঘটনা শুধুই একটি প্রকল্পের নয়, বরং সরকারের জবাবদিহির সংকটকেও সামনে নিয়ে এসেছে। এখন দেখার বিষয়, বিজেপি সরকার কীভাবে এই বিতর্ককে সামাল দেয়, এবং প্রকৃতপক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেয় কি না।
এই দুর্নীতির চাপে মহারাষ্ট্র সরকারের জনপ্রিয়তা কতটা ধাক্কা খাবে, তা অবশ্য সময়ই বলবে। তবে এখনই স্পষ্ট— ভুয়ো পরিচয়ে ভাতা তোলার ঘটনাটি নিয়ে জোর বিতর্কের মুখে বিজেপি নেতৃত্বাধীন শরিক সরকার।