বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনই এর অপব্যবহারও ক্রমাগত বাড়ছে। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে রাজারহাটের রাইগাছি এলাকায়। মহিলা সেজে প্রতারণা (Online fraud)করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মহম্মদ ওয়াসিম আলি নামে এক যুবককে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওয়াসিম আলি একাধিক মানুষকে ভিডিও কলে মহিলাদের মতো গলা করে কথা বলত এবং প্রথমে বন্ধুত্ব করত। এরপর ধীরে ধীরে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে সুযোগ বুঝে প্রতারণা করত। অভিযোগ, সে ভিডিও কলের মাধ্যমে গোপন মুহূর্তের ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করত, যা পরে ব্ল্যাকমেইলের জন্য ব্যবহার করা হত।
ওয়াসিম আলি মহিলাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি করত। সেখান থেকে পুরুষদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার পরে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ পেত। মহিলাদের মতো কথা বলে ও ভিডিওতে মহিলা সেজে থাকা অবস্থায় বিশ্বাস অর্জন করা ছিল তার মূল কৌশল।
ভিডিও কলের সময় বিভিন্ন আপত্তিকর মুহূর্তের স্ক্রিনশট নিত এবং পরবর্তী সময়ে সেই ছবি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করত, তাদের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করার হুমকি দিত।
ওয়াসিমের বিরুদ্ধে রাজারহাট থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একটি ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং তাকে রাইগাছি এলাকায় তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, শুধু রাজ্যের মধ্যেই নয়, ভিন রাজ্যেও ওয়াসিমের বিরুদ্ধে একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াসিম তার অপরাধ স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, এই ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে সে বড় অঙ্কের টাকা উপার্জন করেছে। প্রতারণার কাজ চালানোর জন্য সে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ফেক আইডি ব্যবহার করত।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওয়াসিমের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ থেকে বেশ কয়েকটি আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, প্রতারণার কাজে সে অত্যন্ত দক্ষ ছিল এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় ছিল।
এই ঘটনার পর রাজারহাট এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওয়াসিম দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বাস করছিল, কিন্তু তার এই ধরনের কাজ সম্পর্কে কেউই কিছু জানত না। এমনকি প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওয়াসিম সাধারণ জীবনযাপন করত এবং তার আচরণে কখনও সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়নি।
এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি শেয়ার করা উচিত নয়। ভিডিও কলের সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া উচিত।
পুলিশ সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছে, যদি কেউ এই ধরনের প্রতারণার শিকার হন, তবে সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ জানাতে।
ওয়াসিম আলির মতো প্রতারকরা প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। তবে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং সক্রিয় তদন্তের ফলে এই ধরনের অপরাধ দমন করা সম্ভব। অনলাইনে সুরক্ষা এবং সচেতনতার মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচা সম্ভব।