সম্প্রতি অসম সরকার একের পর এক বাংলা ভাষী এবং বাঙালি (Mamata Banerjee) নাগরিকদের এনআরসি (নাগরিকত্ব সংশোধনী) নোটিস পাঠানোর ঘটনায় ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে, বাঙালি সমাজের প্রতি অসম সরকারের এই পদক্ষেপকে ক্ষতিকর এবং বিভাজনমূলক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, অসম সরকারের এই পদক্ষেপ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ, যা বাংলার মানুষের উপর একটি প্রতিহিংসার প্রতিফলন(Mamata Banerjee)
নতুন এনআরসি নোটিস: ফালাকাটার অঞ্জলি শীলের নাম উঠে আসা
এপ্রিল মাসের প্রথমদিকে কোচবিহারের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী অসম ফরেন ট্রাইব্যুনাল থেকে এনআরসি নোটিস পেয়েছিলেন। এবং এবার নতুন এক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটার বাসিন্দা অঞ্জলি শীলকেও একই নোটিস পাঠানো হয়েছে। গত কয়েকদিনে বাংলার মানুষের মধ্যে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুনরায় মুখ খুললেন। তিনি প্রশ্ন তুললেন, ‘‘কেন বারবার বাংলার মানুষকে বিব্রত করা হবে? কেন অসম সরকার বাংলার বিষয়ে নাম গলাবে?’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যাতে বাংলার মানুষকে সংকটের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।’’(Mamata Banerjee)
বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ তকমা: বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতার অভিযোগ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে অনেকবার বলেছেন, ‘‘বাংলায় কথা বললেই, বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।’’ এই অভিযোগে তিনি বিজেপি সরকারকে একাধিক বার তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি ভাষী মানুষদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ হচ্ছে। বিজেপি সরকার বাঙালি ভাষাকে আক্রমণ করতে চাইছে, যাতে বাংলার মানুষ নিজেদের পরিচিতি হারিয়ে ফেলুক এবং দেশপ্রেমের নামে বিভাজন সৃষ্টি করা হোক।’’ তার মতে, অসমের এই পদক্ষেপ কেন্দ্রের ‘বিভাজন’ কৌশলের অংশ, যাতে বাংলায় একটি এনআরসি চালু করা যায় এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার প্রতি মমতার তোপ
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু অসম সরকারের বিরুদ্ধে নয়, সরাসরি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অসমের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নিজের রাজ্যের পরিস্থিতি দেখছেন না, বরং বাংলার মানুষের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নেমেছেন।’’ মমতা অভিযোগ করেন, ‘‘অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে বহু বাঙালি মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের আটকে রাখা হচ্ছে। সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ, কিন্তু অসমের মুখ্যমন্ত্রী তার নিজ রাজ্যের বিশৃঙ্খলতার দিকে নজর দিচ্ছেন না।’’ মমতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেন বারবার বাংলার মানুষের উপর এই অনৈতিক আচরণ করা হচ্ছে?’’
বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক বিরোধিতা
বাংলায় এই ধরনের ঘটনা কোনও নতুন কিছু নয়। এর আগেও দেখা গেছে, অনেক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলায় কথা বললে বা বাংলা ভাষায় নিজের অধিকার দাবী করলে নানা ধরনের দাঙ্গা ও বিরোধ সৃষ্টি হয়। ২০২০-২০২১ সালের মধ্যেই বেশ কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে, বিশেষ করে আসাম, বিহার, উত্তরপ্রদেশে বাঙালি ভাষী জনগণের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণের ঘটনা উঠে আসে। এসব ঘটনার মূলেই ছিল বাঙালি ভাষাকে একটি ‘বিদেশি’ ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা এবং বাঙালি জনগণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া। এই ধরনের বিভাজনমূলক মনোভাবই সমাজের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি করে।
মমতার সতর্কবার্তা: ‘এনআরসি’ বাংলায় নয়!
এনআরসি নিয়ে মমতার বার্তা স্পষ্ট, ‘‘এনআরসি বাংলায় কখনও চলবে না।’’ তিনি আগেই মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘‘অসমের এনআরসি প্রক্রিয়া ও বাংলায় এনআরসি চালানোর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষ শান্তিপ্রিয়, কিন্তু তারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কোনও ধরনের আপস করবে না।’’ এর পাশাপাশি, মমতা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন যে, কেন্দ্র বিজেপির মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ভাষাকে আক্রমণ করছে।
উত্তাল বাংলার প্রতিবাদ: সারা রাজ্যে প্রতিবাদী সুর
এই পরিস্থিতিতে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ তীব্র হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা একযোগে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়।