কলকাতা: কলকাতা ও আশেপাশের এলাকায় টানা ভারী বৃষ্টির জেরে শহর কার্যত অচল। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ২৫১ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। এর ফলে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে জল জমে যায়। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও আবার কোমর সমান জল। জলমগ্ন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের দুর্ভোগ তীব্রতর হয়। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিদ্যুতের সংস্পর্শে মৃত্যু। ইতিমধ্যেই কলকাতা ও আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
এই পরিস্থিতিতে নাগরিক সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে জরুরি বৈঠকে বসে বিধাননগর পুরসভা। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, যতদিন পর্যন্ত রাস্তায় জল থাকবে, ততদিন পথবাতি (Streetlights) জ্বালানো হবে না। জল পুরোপুরি নামলেই পুনরায় স্বাভাবিকভাবে চালু হবে রাস্তার আলো। পুরসভার যুক্তি, জমা জলে রাস্তার আলো জ্বলে থাকলে শর্ট সার্কিট কিংবা বিদ্যুতের লিকেজ হয়ে বিপদ আরও বাড়তে পারে। তাই আপাতত অন্ধকার হলেও নাগরিক সুরক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ।
পুরসভার কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জল নামানোর কাজ শুরু করেছেন। পাম্পিং স্টেশন চালু রাখা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও জল নামতে সময় লাগছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি না হলে কয়েকদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় আগামী কয়েকদিনও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি হাওড়া, হুগলি এবং দুই ২৪ পরগনায়ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর (চতুর্থী) আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। এর ফলে শহরের পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, আলো বন্ধ থাকায় রাতের বেলায় রাস্তায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশেষত কর্মজীবী মানুষ বা জরুরি কাজে যাতায়াতকারীদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে অধিকাংশ নাগরিকই পুরসভার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ বিদ্যুতের সংস্পর্শে মৃত্যু রুখতে এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়।
প্রশাসনের তরফে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, নাগরিকরা অকারণে বাইরে না বেরোন, জল জমে থাকা এলাকা এড়িয়ে চলুন এবং বিদ্যুতের খুঁটি বা ভেজা তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। এছাড়াও পুরসভা জানিয়েছে, যেখানে প্রয়োজন সেখানে বিকল্প আলোর ব্যবস্থা করা হবে।
সব মিলিয়ে, কলকাতা এবং বিধাননগরের নাগরিকরা এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছেন। পুরসভার মূল লক্ষ্য নাগরিক সুরক্ষা। জল দ্রুত নামানো গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে আবার যদি প্রবল বৃষ্টি হয়, তাহলে আরও কিছুদিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে সাধারণ মানুষকে।
সুরক্ষার জন্য রাস্তার আলো বন্ধ রাখার এই পদক্ষেপকে অনেকেই দায়িত্বশীল ও মানবিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন। নাগরিক জীবনে কিছুটা অস্বস্তি এলেও প্রাণ বাঁচানোই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
