“পরীক্ষা ছাড়া চাকরি নয়, তবে বিকল্প আইনি পথ খোলা” — মুখ্যমন্ত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা

রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ (SSC Teacher Recruitment) দুর্নীতির মামলায় চাকরি হারানো প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনার অবসান হয়নি এখনও। সোমবার শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে ছ’জন চাকরিহারার প্রতিনিধি স্পষ্টভাবে…

Mamata Banerjee

রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ (SSC Teacher Recruitment) দুর্নীতির মামলায় চাকরি হারানো প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনার অবসান হয়নি এখনও। সোমবার শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে ছ’জন চাকরিহারার প্রতিনিধি স্পষ্টভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া জানান। তাঁদের মূল দাবি, পরীক্ষা ছাড়াই যোগ্য প্রার্থীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক এবং সেই দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ নিয়োগ প্যানেল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু চাকরি হারানো প্রার্থীরা ফের পরীক্ষা দিতে নারাজ।

এই প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় নবান্নে বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক।

   

প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য সরকার ৩১ মে-র মধ্যে নতুন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। অর্থাৎ, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেই প্রশাসন এগোবে। একই সঙ্গে তিনি আশ্বস্ত করেন, রাজ্য সরকার চায় যাতে চাকরি হারানোরা আবার চাকরিতে ফিরে আসতে পারেন। তবে সেই পথ একমাত্র আদালতের নিয়ম মেনেই অনুসরণ করা যাবে।

দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা আইন মেনেই চলি। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।” রাজ্য সরকারের হাতে টাইম ছিল, কিন্তু তারা ইচ্ছে করে বিলম্ব করেনি। তারা অপেক্ষা করছিল রিভিউ পিটিশনের শুনানির জন্য। যেহেতু এখনও সেই শুনানি হয়নি, তাই আপাতত সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান নির্দেশ মেনেই পরীক্ষা নিতে হবে।

তিনি আরও জানান, “রিভিউ পিটিশনের শুনানিতে যদি আমাদের পক্ষে আদেশ আসে, তাহলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আবার যদি আদালতের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকে, তবে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়েই যেতে হবে।

Advertisements

রাজ্য সরকারের এই অবস্থান কিছুটা মধ্যপন্থী। তারা একদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মান্য করছে, অন্যদিকে চাকরি হারানোদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেও তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, কারণ সেটি ভবিষ্যতে আরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ৩১ মে-র মধ্যে নতুন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং রিভিউ পিটিশনের শুনানি। যদি রিভিউতে রাজ্য সরকার সাফল্য পায়, তবে পুনর্বহালের একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। নচেত, চাকরিহারাদের সামনে ফের পরীক্ষা দেওয়ার পথই খোলা থাকবে।

চাকরি হারানো প্রার্থীদের একটি বড় অংশ এখনও নিজেদের চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও, আইনের বাঁধা এবং আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এই অবস্থায় সকলের নজর এখন সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশনের শুনানির দিকেই।

শেষ পর্যন্ত চাকরিহারাদের জন্য কি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা থাকে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আইন মেনে এবং মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে কথা বলেছেন, তা থেকে বোঝা যায়, রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে যাতে কেউ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।