কলকাতা: কসবা আইন কলেজ গণধর্ষণ কাণ্ডে (Kasba Case) ফের বিস্ফোরক মোড়। পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হতেই ফের তিন অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করল পুলিশ। তবে শুনানির শুরুতেই চমক। মূল অভিযুক্ত এবং তাঁর দুই অনুগামীর আইনজীবী তাঁদের মক্কেলদের জন্য জামিনের আবেদনই করেননি।
আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জানান, তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতেই তাঁরা জামিন চাইছেন না। শুধু তাই নয়, জেরার সময় আইনজীবীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার আবেদনও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছেন অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবীরা।
আদালতে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তাঁরা বলেন, ‘‘এটা একটি বড় ষড়যন্ত্র। FIR পড়লেই স্পষ্ট বোঝা যায়, ঘটনা গণধর্ষণের নয়।’’ তাঁদের প্রশ্ন, নির্যাতিতার মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কিনা? যদি হয়ে থাকে, তা কি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে? অভিযুক্তদের সবার কল ডিটেইলস নেওয়া হয়েছে কিনা, সেই বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী সৌরিন ঘোষাল অবশ্য পাল্টা সওয়াল জবাবে বলেন, ‘‘তদন্ত চলাকালীন সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা আবার ঘটনাস্থলে যাব। মেডিক্যাল, ডিজিটাল এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে এবং সবকিছুতেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলছে।’’
সর্বোচ্চ চাঞ্চল্যের মুহূর্ত আসে যখন সরকারি আইনজীবী ইনহেলারের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি আদালতে বলেন, ‘‘যখন নির্যাতিতার উপর প্রথম দফার অত্যাচার চলছিল, তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন তিন অভিযুক্তের মধ্যে একজন পাশের দোকান থেকে ইনহেলার নিয়ে এসে তাঁকে দেন। উদ্দেশ্য ছিল, তাঁকে সুস্থ করে আবারও অত্যাচার চালানো। এটা অত্যাচারের জন্য মরিয়া মানসিকতার পরিচয়।’’
পুলিশও আদালতে দাবি করেছে, ইনহেলার আনা হয়েছিল নির্যাতিতাকে অত্যাচারের উপযোগী অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে। শুধু তাই নয়, ওই রাতে নির্যাতনের সময় নির্যাতিতার শারীরিক পরিস্থিতি কতটা খারাপ ছিল, তাও বিস্তারিত তুলে ধরা হয় আদালতে।
ঘটনায় ধৃত কলেজের নিরাপত্তারক্ষীর আইনজীবীও জামিনের আবেদন করেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার মক্কেলের ক্ষমতা সীমিত ছিল। আদালত যেন তদন্ত করে নিরপেক্ষভাবে রায় দেয়।’’
পুলিশের তরফ থেকে তিন অভিযুক্ত ও নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে তদন্তের স্বার্থে আরও দশ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে। আদালত সমস্ত যুক্তি খতিয়ে দেখে আগামী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
এই মামলার পরতে পরতে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এখন দেখার, পুলিশের আবেদন মেনে আদালত কতদিনের হেফাজত মঞ্জুর করে এবং পরবর্তী তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয়।