বন্দুক এবং কার্তুজের লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কীভাবে চোরাচালান চলছিল, তা নিয়ে এখন লালবাজারের হাতে বিস্ফোরক তথ্য এসেছে। বেঙ্গল এসটিএফের অভিযানে জীবনতলায় আব্দুল রশিদ মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১৯০ রাউন্ড কার্তুজের ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহ, এটি শুধু একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রের ব্যবসা নয়, বরং চোরাচালানকারী চক্রের অংশ।
এমন পরিস্থিতিতে, পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমস্ত অস্ত্র ও কার্তুজই ছিল লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তবে, অবৈধভাবে এই অস্ত্রগুলোর প্রচলন এবং তাদের চোরাচালানের কাজ চলছিল, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল কিছু চোরাচালানকারী ডিলার। শনিবার রাতে জীবনতলার উজিরমোড় এলাকার বাসিন্দা হাজী আব্দুল রশিদ মোল্লার বাড়িতে এই রেইডটি চালানো হয়। তদন্তের সময় উদ্ধার হয় ১৯০টি কার্তুজ এবং আগ্নেয়াস্ত্র। যদিও এগুলির লাইসেন্স রয়েছে, পুলিশ দাবি করছে যে, এগুলি চোরপথে বিক্রি করা হতো এবং অবৈধভাবে অন্য জায়গায় সরানো হতো।
অভিযান চালানো পুলিশ জানিয়েছে, রশিদ মোল্লার সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন, যাদের মধ্যে হাসনাবাদের আশিক ইকবাল গাজি, আবদুল সেলিম গাজি এবং শান্তিপুরের জয়ন্ত দত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে গুলি ও অস্ত্র পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, লালবাজারের কাছে কিছু অস্ত্র ডিলারের নাম উঠে এসেছে, যাদের কাছ থেকে কার্তুজ সরবরাহ করা হতো। জানা গেছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক এজেন্টের মাধ্যমে গুলি বিক্রি হতো। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, ১৯০টি কার্তুজগুলি ছিল লাইসেন্সপ্রাপ্ত .৩২ বোরের পিস্তলের। প্রতি কার্তুজ ডিলারের কাছ থেকে ১২০ টাকায় কেনা হতো, অথচ পাচারের মাধ্যমে তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হতো।
একটি চাঞ্চল্যকর দিক হলো, বৈধ অস্ত্রধারীদের জন্য যে কার্তুজের কোটা নির্ধারিত থাকে, সেটি দিয়েই এই চোরাচালান চলত। যেসব অস্ত্রধারীর লাইসেন্স আছে, তারা বছরে ৫০টি পর্যন্ত কার্তুজ নিতে পারেন। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই কোটার পরিমাণ বাড়িয়ে ২০০ পর্যন্ত কার্তুজ দেয়া হয়। এই ব্যবস্থাকেই কাজে লাগিয়ে, কিছু অবৈধ অস্ত্রধারী তাদের কোটা দেখিয়ে এই কার্তুজগুলো বাজারে বিক্রি করতেন।
এভাবে চোরাচালানকারীরা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং কার্তুজ, যেগুলি শুধু স্থানীয় বাজারে নয়, বরং অন্য জায়গাতেও বিক্রি করা হতো। এই অবৈধ ব্যবসার চক্রটি এতটাই সুগঠিত ছিল যে, পুলিশের পক্ষে এটি ধরে ফেলতে কিছুটা সময় লেগেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এতকাল কীভাবে এই অবৈধ কার্তুজ এবং অস্ত্র ব্যবসা চলছিল? কেনই বা প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই চক্রের খোঁজ পেল না? তদন্তের মাধ্যমে আরও বড় বড় নাম সামনে আসবে কিনা, তা এখন দেখার বিষয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত থাকতে পারে, যারা ইতিমধ্যেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এই ধরনের চোরাচালান এবং অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হতে পারে। পুলিশের অভিযানে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসার পর, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বা গ্যাং অপরাধের সঙ্গে এই অস্ত্রের সম্পর্কও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।