বারাকপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল (Metro Railway Kolkata) সম্প্রসারণের কাজ নিয়ে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বারাকপুর থেকে কল্যাণী পর্যন্ত পাতালরেল চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী পার্থ ভৌমিক। সেই অনুযায়ী তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোকে চিঠি দিয়েছিলেন। ডানলপ মোড় পর্যন্ত মেট্রো লাইন এসে পৌঁছেছে। একদিকে রয়েছে বরানগর এবং অন্যদিকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন।
ডানলপ মোড় থেকে বি টি রোড বরাবর বারাকপুর চিড়িয়ামোড় পর্যন্ত মেট্রো (Metro Railway Kolkata) সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রুটটি প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। এতে মোট ১০টি স্টেশন থাকবে। প্রস্তাবিত রুটটি বরানগর মেট্রো স্টেশন থেকে ডানলপ মোড়ে ইন্টারচেঞ্জ হবে। এরপর কামারহাটি, আগরপাড়া, সোদপুর, পানিহাটি, সুভাষনগর, খড়দহ, টাটা গেট, টিটাগড় এবং তালপুকুর হয়ে বারাকপুরে শেষ হবে।
আগেও বারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে, সে সময় তা বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ, ব্রিটিশ আমলে পলতার গঙ্গা থেকে জল তুলে শোধন করে টালা ট্যাঙ্কে নিয়ে যাওয়ার জন্য বি টি রোডের তলা দিয়ে পাইপ বসানো হয়েছিল। বর্তমানে, বি টি রোডের নিচ দিয়ে মোট ছয়টি পাইপলাইন চলে গেছে। বারাকপুর পর্যন্ত মেট্রোর কাজের জন্য পিলার তুলতে গেলে বি টি রোড খুঁড়তে হবে।
এখন, যদি এই পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের সংকট দেখা দিতে পারে। তাই মেট্রো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে যাতে জল সরবরাহের পাইপলাইন অক্ষুণ্ণ থাকে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে মেট্রোর পিলার তোলা সম্ভব হবে।
এছাড়া, একবারে বারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো লাইন বসানোর পরিবর্তে দুটি পর্যায়ে কাজ করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বরানগর থেকে সোদপুর পর্যন্ত কাজ হবে। পরবর্তী পর্যায়ে বাকি অংশের কাজ হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি কেএমসির কাছে জানানো হয়েছে।
গঙ্গাপাড়ের শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মেট্রো লাইনের কাজ বাস্তবায়িত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। মহকুমাশাসক সৌরভ বারিক জানিয়েছেন, ‘সরকারের তরফে আসা নির্দেশ অনুযায়ী আমরা সহযোগিতা করব।’
মেট্রোর কাজ শুরু হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। মানুষ দ্রুত এবং সুবিধাজনকভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছতে পারবেন। বিশেষ করে, বারাকপুর ও এর আশপাশের অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা হবে। মেট্রোর মাধ্যমে যাতায়াতের সময়ও কমে যাবে। তাই এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি সুখবর।
এছাড়া, পরিবেশগত দিক থেকেও এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গাড়ির সংখ্যা কমলে পরিবেশের উপর চাপ কমবে। ট্রাফিক জ্যাম কমানো, দূষণ কমানো, এবং দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, মেট্রোর সুবিধা থেকেই আসবে।
এই প্রকল্পটি কেবলমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি করবে না বরং এটি এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এলাকাবাসী আশা করছেন, খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়িত হবে।
এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে যে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে, তা আগামীতে আরও বড় মাপের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে আসবে। ফলে, এই মেট্রোর প্রকল্পটি একদিকে যেমন জনসাধারণের জন্য উপকারী হবে, তেমনি এটি এলাকার অবকাঠামো উন্নত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এখন অপেক্ষা, মেট্রোর কাজ কবে শুরু হবে এবং কতদিনে এটি সম্পূর্ণ হবে। তবে, যেহেতু প্রশাসন ইতিমধ্যেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তাই আশাবাদী হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।