নবান্নে প্রবেশে নতুন নিয়ম, নিরাপত্তা রক্ষায় কড়া পদক্ষেপ

রাজ্য প্রশাসনের প্রধান কার্যালয় নবান্নে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারের আচমকা উপস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের অন্দরমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।…

PIL Likely in Calcutta HC Against Protest Marches Towards Nabanna

রাজ্য প্রশাসনের প্রধান কার্যালয় নবান্নে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারের আচমকা উপস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের অন্দরমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এই ঘটনার জেরেই নবান্নে প্রবেশে নতুন নিরাপত্তা বিধি জারি হয়েছে। এখন থেকে শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারী বা ভিজ়িটর নন, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং এমনকি পুলিশকর্মীদেরও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঢুকতে হবে নবান্নের চত্বরে।

নতুন বিধি অনুযায়ী, কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার আর অনুমতি ছাড়া নবান্নে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাঁদেরও ভিজ়িটরের মতো নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র নিতে হবে। প্রবেশের আগে তাঁদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে, নাম নথিভুক্ত করে জানাতে হবে কোথায় এবং কার কাছে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, এখন থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্যও প্রবেশ ব্যবস্থা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত।

   

এই কড়াকড়ির পিছনে মূল কারণ একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। একদিন আচমকাই নবান্নের ১৪ তলায় এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা যায়। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি তলা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তর অবস্থিত। প্রশাসনের মতে, ওই ভলান্টিয়ারের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল না। তিনি কীভাবে সেখানে পৌঁছে গেলেন, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে। জানা যায়, তিনি প্রথমে লিফটে করে ১৩ তলায় যান, এরপর সিঁড়ি দিয়ে উঠে পড়েন ১৪ তলায়। ওই মহিলা তমলুকের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পর তাঁকে শিবপুর থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যদিও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও আঁটসাঁট করার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেয়। নবান্ন, যা রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর, সেখানে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুধু সিভিক ভলান্টিয়ার নয়, এবার থেকে পুলিশকর্মীদের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু নয়া নিয়ম চালু করা হয়েছে।

নবান্নে কর্মরত প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে এখন থেকে নিজ নিজ পরিচয়পত্র বুকে ঝুলিয়ে ডিউটি করতে হবে। পাশাপাশি, কোন পুলিশকর্মী কোন জায়গায় ডিউটি করবেন, তার বিস্তারিত তালিকা প্রতিদিন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এই তালিকা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও নজরে রাখা হচ্ছে।

Advertisements

নবান্নে প্রবেশপথে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত নজরদারি ক্যামেরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, কেউ যাতে পরিচয়পত্র ছাড়া ভেতরে প্রবেশ না করতে পারেন। এমনকি পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও তাঁদের গন্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।

প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে নবান্নের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, উচ্চপদস্থ আমলাদের নিরাপত্তা যাতে কোনওভাবেই বিঘ্নিত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ।

এই ঘটনার পরে নবান্নে নিরাপত্তার প্রশ্নে যে মনোভাব প্রশাসন দেখিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে কঠোর। তবে প্রশ্ন উঠছে, এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও ওই সিভিক ভলান্টিয়ার কীভাবে এতদূর পৌঁছালেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত কী আদৌ হয়েছে? আর ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে কী আরও কোনও গোপন প্রোটোকল নেওয়া হচ্ছে?

নবান্নে নিরাপত্তা নিয়ে এই নজিরবিহীন কড়াকড়ি নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক সচেতনতার প্রতিফলন। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা যাতে সাধারণ কর্মীদের কাজের ক্ষেত্রে অযথা জটিলতা না সৃষ্টি করে, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি।