ফের বঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, মোদির ঝড়ে ঘুম কাড়বে কি বাংলার শাসকদলের?

ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে গরম হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিজেপি একপ্রকার পাখির চোখ করেছে ২০২৬-এর ভোটকে। সেই লক্ষ্যেই একের পর এক…

Narendra Modi to Visit Bengal Ahead of Mahalaya

ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে গরম হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিজেপি একপ্রকার পাখির চোখ করেছে ২০২৬-এর ভোটকে। সেই লক্ষ্যেই একের পর এক সফরে বাংলায় আসছেন দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। গত কয়েকদিনের মধ্যে টানা তিনবার বাংলায় পা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) । বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর, মহালয়ার আগেই ফের বাংলায় আসতে চলেছেন তিনি।

রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যে সংগঠন মজবুত করতে এবং ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতেই মোদির(Narendra Modi) বারবার আগমন। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এবার দুর্গাপুজোর মরসুমে বাংলায় আসতে চলেছেন। তিনি কলকাতার কয়েকটি বড় পুজোর উদ্বোধন করবেন বলেই খবর। স্বাভাবিকভাবেই মোদি-শাহের টানা সফরে উজ্জীবিত বঙ্গ বিজেপি।

   

বিজেপির লক্ষ্য ও কৌশল

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন জিতেছিল। তবে পরে দলবদলের কারণে সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে আসন্ন ২০২৬ সালের নির্বাচনে আসন সংখ্যা বাড়ানো এখন বিজেপির কাছে একেবারে মর্যাদার লড়াই। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে— বাংলার প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগে আগামী এক বছরের মধ্যে অন্তত একটি করে প্রধানমন্ত্রীর সভা করতে হবে। ইতিমধ্যেই তিনটি সভা সম্পন্ন করেছেন মোদি।

শোনা যাচ্ছে, মহালয়ার ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর, নবদ্বীপে একটি বড়সড় জনসভা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। পুজো শেষে অক্টোবর থেকেই জোরকদমে শুরু হবে প্রচারাভিযান। একাধিক বৈঠক, রোড শো, সভা এবং সাংগঠনিক কর্মশালার মাধ্যমে বিজেপি চাইছে ভোটের সমীকরণ নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে আনতে।

মোদির সাম্প্রতিক সফর

গত শুক্রবারই ফের বাংলায় এসেছিলেন মোদি(Narendra Modi) । বিকেল ৪টে বেজে ৫ মিনিট নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সফরের মূল কর্মসূচি ছিল পরিকাঠামো উন্নয়ন ঘিরে। একসঙ্গে তিনটি মেট্রো রুট উদ্বোধন করেন তিনি। তারপর পড়ুয়া ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি মেট্রো সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই দমদমে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি, যেখানে বাংলার উন্নয়নে কেন্দ্রের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন এবং তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।

Advertisements

মহালয়া ও পুজোর আগমনী বার্তা

মহালয়া মানেই বাংলায় উৎসবের সূচনা। পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনার দিনকে কেন্দ্র করেই নতুন রাজনৈতিক বার্তা ছড়াতে চাইছে বিজেপি। একদিকে নবদ্বীপে মোদির জনসভা, অন্যদিকে কলকাতার পুজো উদ্বোধনে অমিত শাহের আগমন— দুই মেলবন্ধনকে ঘিরে যে রাজ্য রাজনীতি তীব্র হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার আবেগকে ছুঁয়ে যাওয়ার জন্যই বিজেপি মহালয়ার সময়কেই বেছে নিয়েছে। সাধারণ মানুষ যখন উৎসবের আবহে, তখন মোদি-শাহের উপস্থিতি ভোটারদের মন জয় করতে পারে— এই হিসেবেই পদ্ম শিবিরের কৌশল।

তৃণমূল বনাম বিজেপি

অন্যদিকে, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল অবশ্য এই সফরকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাইছে না। তাঁদের দাবি, বিজেপি যতবারই সভা করুক, বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বিশ্বাস করে। তবে বিজেপির অভ্যন্তরীণ হিসেব আলাদা। তারা মনে করছে, গত লোকসভা নির্বাচনের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এখন থেকেই মাঠে নামা দরকার। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের টানা সফর এবং সাংগঠনিক কর্মসূচি।

সব মিলিয়ে মহালয়ার আগেই মোদির নবদ্বীপ সফর এবং পুজোর মরশুমে শাহর কলকাতা আগমন নিঃসন্দেহে বাংলার রাজনৈতিক আবহকে উত্তপ্ত করে তুলবে। আসন বাড়ানো এবং রাজ্যে সরকার গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে বিজেপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। পুজো শেষে যখন পুরো মাত্রায় প্রচার শুরু হবে, তখন রাজ্যের রাজনীতি যে আরও তীব্র রূপ নিতে চলেছে, তা এখন থেকেই আঁচ করা যাচ্ছে।