জনসংযোগে মমতার মাস্টারস্ট্রোক, ময়দানে নামছেন পঞ্চায়েত প্রধান-বিধায়করা

২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জনসংযোগে জোর বাড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার একেবারে প্রান্তিক স্তরে পৌঁছনোর লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তিনি। মঙ্গলবার…

Mamata Banerjee hindi s[eech controversy

২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জনসংযোগে জোর বাড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার একেবারে প্রান্তিক স্তরে পৌঁছনোর লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তিনি। মঙ্গলবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যজুড়ে বুথ ভিত্তিক ক্যাম্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান ও নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য চালু হচ্ছে ‘আমার পাড়া, আমার সমাধান’ নামে একটি নতুন প্রকল্প।

এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হল, প্রতিটি এলাকার সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন এবং তাঁদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়। এজন্য রাজ্যের ৮০ হাজার বুথে ২ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ ক্যাম্প। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা চাই মানুষ যাতে সোজা কথা বলতে পারেন, আর সোজা সমাধান পান।’’

   

এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা বুথস্তরে উপস্থিত থাকবেন। তাঁরা সরাসরি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা শুনবেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করবেন। সমস্যা যদি জটিল হয়, তাহলে তা নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

তবে এই কর্মসূচিতে শুধু সরকারি কর্মচারীরাই থাকবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বুথে উপস্থিত থাকতে হবে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, ব্লক সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য, এমনকি বিধায়ক এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদেরও। তাঁদেরকে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে কাজ করতে বলা হয়েছে, যাতে কোনও অভিযোগ উপেক্ষিত না হয়।

এই প্রসঙ্গে বুধবার নবান্নে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি স্পষ্ট করে দেন, এই প্রকল্পে কোনওরকম ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না। জনপ্রতিনিধিদের নিয়মিত এই ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে এবং তাঁদেরও অংশগ্রহণমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ক্যাম্প যেন পরিকল্পনা মাফিক হয় এবং মানুষের অভিযোগ ও পরিষেবা সংক্রান্ত ফিডব্যাক যথাযথভাবে রেকর্ড করা হয়।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প রাজনৈতিক দিক থেকেও তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বুথস্তরে গিয়ে জনসংযোগ বাড়ানো এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যাবে এই কর্মসূচির মাধ্যমে। বিজেপি বা অন্য বিরোধীদের তরফে যেভাবে বারবার অভিযোগ উঠেছে, যে রাজ্য সরকার মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, এই প্রকল্প তার সরাসরি উত্তর বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস তার পুরনো মাটির সংগঠনকে আবার নতুন করে সক্রিয় করতে চাইছে। কারণ, বুথ স্তরে সংগঠনকে মজবুত না করতে পারলে ভবিষ্যতের নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। ফলে এই কর্মসূচি শুধুমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটি দলীয়ভাবে একটি কৌশলগত চাল বলেও মনে করছেন অনেকে।

সব মিলিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘আমার পাড়া, আমার সমাধান’ প্রকল্প শুধু প্রশাসনিক উদ্যোগ নয়, এটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এখন দেখার, এই প্রকল্প বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এবং কতটা মানুষের আস্থা ফেরাতে পারে রাজ্য প্রশাসনের প্রতি।