সামনেই দুর্গাপুজো ( durga puja)। হাতে রয়েছে পাক্কা এক মাস। শহর-গ্রামে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। বড় বড় দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার পাড়ার বাজার—সব জায়গাতেই এখন ক্রেতাদের ভিড়। এর মাঝেই নবান্ন থেকে এল বড় সুখবর। রাজ্যের অর্থদফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এবার ভাতা বাড়ানো হচ্ছে আরও ৩ হাজার টাকা। ফলে উৎসবের মরসুমে খানিকটা হলেও স্বস্তির হাওয়া বইল সাধারণ মানুষের ঘরে।
ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা
অর্থদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যের নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষদের জন্য বিশেষ ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। এতদিন যে পরিমাণ অর্থ তাঁরা পেতেন, তার সঙ্গে এবার অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা যোগ হবে। অর্থাৎ আগের তুলনায় ভাতার অঙ্ক দাঁড়াবে আরও মোটা টাকায়। সরকারের তরফে দাবি, উৎসবের মরসুমে যাতে আর্থিক চাপে পড়তে না হয়, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
কারা পাবেন এই সুবিধা?
নবান্ন সূত্রে খবর, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আওতায় যাঁরা মাসিক ভাতা পান, তাঁদের অনেকেই এই বাড়তি অর্থের সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক, বিধবা মহিলা, প্রতিবন্ধী মানুষদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। পাশাপাশি, কিছু কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রকল্পের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট তালিকা খুব শীঘ্রই প্রকাশ করবে অর্থদফতর।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
অর্থদফতরের এক কর্তার কথায়, “দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। এই সময়ে পরিবারের খরচ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই সরকার চেয়েছে, আর্থিক অনটন যেন মানুষকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত না করে। সেই কারণেই ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের এই পদক্ষেপ মানুষের হাতে নগদের প্রবাহ বাড়াবে, যার ফলে বাজারেও চাঙ্গাভাব আসবে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ভাতা বাড়ানোর খবর পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ। অনেকেই জানিয়েছেন, পুজোর সময় নতুন জামাকাপড় কেনা থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন—সবকিছুতেই প্রচুর খরচ হয়। সেই জায়গায় সরকারের এই বাড়তি অর্থ তাঁদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। শিয়ালদহের এক প্রবীণ নাগরিক বললেন, “আমরা তো ভাতার টাকাতেই দিন কাটাই। এবার বাড়তি ৩ হাজার টাকা পেলে নাতি-নাতনিদের জন্য অন্তত কিছু কেনাকাটা করতে পারব।”
একই সুর শোনা গেল এক বিধবা মহিলার গলাতেও। তাঁর কথায়, “বছরের এই সময়টায় সব বাড়িতেই আনন্দ হয়। কিন্তু টাকার অভাবে আমাদের আনন্দে ঘাটতি পড়ে। এবার সরকারের ঘোষণায় সেই দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমল।”
বাজারে ইতিবাচক প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎসবের আগে মানুষের হাতে নগদ বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাজারে। খুচরো ব্যবসা থেকে শুরু করে বড় দোকান—সব জায়গাতেই বিক্রি বাড়বে। ইতিমধ্যেই পোশাক, গয়না, ইলেকট্রনিক্স—সব ক্ষেত্রেই আগাম বুকিং শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যে সামগ্রিকভাবে রাজ্যের অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব আনবে, তা বলাই বাহুল্য।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
তবে বিরোধীরা এই ঘোষণাকে দেখছে ভিন্ন চোখে। তাঁদের অভিযোগ, পুজোর মুখে জনমতকে প্রভাবিত করার জন্যই এই পদক্ষেপ। যদিও শাসকদল জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত কোনও রাজনৈতিক কারণে নয়, সম্পূর্ণ মানুষের স্বার্থে। তাঁদের বক্তব্য, সরকার মানুষের পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।