সম্প্রতি কলকাতার (Kolkata) আকাশে এক অদ্ভুত ও রহস্যময় দৃশ্য দেখা যাওয়ায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরজুড়ে। মঙ্গলবার গভীর রাতে মহেশতলা ও বেহালার দিক থেকে সাতটি আলোকজ্জ্বল বস্তু আকাশে উড়ে যেতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই বস্তুগুলো থেকে অস্বাভাবিক আলো বের হচ্ছিল এবং তা দ্রুত গতিতে বিভিন্ন দিকে ঘুরছিল। বিষয়টি প্রথম নজরে আসে সেনাবাহিনীর, কারণ ময়দানের বিস্তীর্ণ এলাকা তাদের অধীনেই রয়েছে। সেনার পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা পুলিশকে জানানো হয় এবং লালবাজার কন্ট্রোল রুম থেকে বিভিন্ন থানাকে সতর্ক করা হয়।
ঘটনার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও সরাসরি এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। কারণ এই ঘটনার আশেপাশেই রয়েছে দ্বিতীয় হুগলি সেতু ও ফোর্ট উইলিয়াম — দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত দিক থেকে সংবেদনশীল স্থান। যেখানে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে আগে থেকেই উত্তেজনা চলছে, সেখানে এই ধরনের রহস্যময় ড্রোন বা আলোঘেরা বস্তু ঘোরাফেরা করাটা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাথমিকভাবে যেটুকু জানা গিয়েছে, সেটি হল এই বস্তুগুলোর গতি ও গতিপথ অনেকটাই ড্রোনের মতো ছিল। তারা মাঝেমধ্যে থেমে গিয়েছে, আবার হঠাৎ করে দিক পরিবর্তন করেছে। কিছু প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, আলোগুলো বহুতলের পেছনে গিয়ে হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এই ঘটনায় রাতের অন্ধকার এবং কুয়াশার জন্য পুরো বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি। সেই কারণেই পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্তে নামার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ড্রোন বা আলোঘেরা বস্তু যদি সত্যিই নজরদারির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়ে থাকে, তবে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও চরম নিরাপত্তা লঙ্ঘনের শামিল। কলকাতার মতো একটি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরে এমন কর্মকাণ্ড প্রশাসনের কাছে চিন্তার কারণ হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে এগুলো আদৌ ড্রোন ছিল কি না। হতে পারে সেগুলো কোনো ধরনের পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি, অথবা কারও ব্যক্তিগত ড্রোন, যা নিয়ম না মেনে ওড়ানো হয়েছে। আবার, কোনো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সেনাবাহিনী ও কলকাতা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এখন এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। আকাশপথে নজরদারির পরিধি বাড়ানো হয়েছে এবং শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ, রাডার রেকর্ড এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতি সংগ্রহ করে গোটা ঘটনার একটি সমন্বিত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও দ্রুত আধুনিক করে তোলা দরকার। শহরের আকাশসীমায় যেকোনো ধরনের অননুমোদিত প্রবেশকে দ্রুত শনাক্ত করে প্রতিরোধ করার মতো ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না গোটা বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে।
এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে বারবার জানানো হয়েছে, আতঙ্কিত না হয়ে বরং যেকোনো অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লেই তা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে জানানোর জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের সতর্ক দৃষ্টি এবং সহযোগিতাই হতে পারে প্রশাসনের সবচেয়ে বড় সহায়।