রহস্যমন্ডিত আরজি করে মর্গেও দুর্নীতির থাবা, জড়িয়ে ‘উত্তরবঙ্গ’ সিন্ডিকেট

আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের (RG Kar Case) ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছে সমগ্র বাংলা। বিচারের দাবিতে দিকে দিকে উঠছে প্রতিবাদের ঝড়। তবে এই…

rg kar medical college

আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের (RG Kar Case) ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছে সমগ্র বাংলা। বিচারের দাবিতে দিকে দিকে উঠছে প্রতিবাদের ঝড়। তবে এই নৃশংস ঘটনা সামনে আসার পর ধীরে ধীরে পর্দাফাঁস হচ্ছে আরজি করের একের পর এক দুর্নীতি। দিন দিন রহস্য দানা বাঁধছে আরজি করকে কেন্দ্র করে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইয়ের নাম উঠে এসেছে। সিবিআই তদন্তকারীদের সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের ওই মেডিক্যাল কলেজের মর্গে অবাধ যাতায়াত ছিল। আর সেখানে প্রতিদিন রাতেই চলতো দুর্নীতি।

তবে শুধু সঞ্জয়ই নয়, সেইসঙ্গে বছরের পর বছর ধরে সেখানে দুর্নীতির যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, তাদের চাঁইদের কয়েক জনেরও নিত্য আনাগোনা ছিল মর্গে। আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় দুর্নীতির হদিস পেয়েছে সিবিআই। তার মধ্যে একটি বড় জায়গা ওই মেডিক্যাল কলেজের মর্গ। ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ারের গ্রেফতারির পর পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, ধৃত সঞ্জয়ের পর্নোগ্রাফিতে মারাত্মক ঝোঁক ছিল। এমনকি ভারতে নিষিদ্ধ অনেক পর্ন-ভিডিয়ো উদ্ধার হয়েছিল তার মোবাইল থেকে।

   

সিবিআই সূত্রের দাবি, সেইসব ভিডিওর মধ্যে ছিল মৃতদেহের সঙ্গে সহবাসের ভিডিয়োও। আর সেগুলো ছিল ওই মেডিক্যাল কলেজের মর্গের ভিতরের। তবে প্রশ্ন উঠছে, ধৃত সেইসব ভিডিও তুলেছে কি ‘নেক্রোফিলিয়া’-য় (মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস করা, এক ধরনের মানসিক ব্যাধি) আক্রান্ত হওয়ার কারণে নাকি এর পেছনে রয়েছে পর্নোগ্রাফির কোনও চক্র? আর তাই তদন্তকারীরা মনে করছেন, ঐসব ভিডিও বিদেশে বিক্রি করে সেখান থেকে মোটা টাকা হয়তো আয় হতো। তবে শুধু পর্নোগ্রাফিই নয়, এর পাশাপাশি বেওয়ারিশ মৃতদেহের হিসাবেও গরমিল চোখে পড়েছে তদন্তকারীদের।

মর্গের ভিতরের নকশা, কোল্ড-চেম্বার, রেজিস্টার খাতার পাশাপাশি কয়েক মাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা। জানা যাচ্ছে, ২০২১ সাল থেকে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে প্রত্যেক বছরেই অন্তত ৬০-৭০টি করে দেহের হিসাব পাওয়া যায়নি। গরমিল দেখা গিয়েছে মৃতদেহ, কঙ্কাল নিয়েও। এমনকি ঠিকঠাক হিসাব নথিভুক্ত নেই মর্গের খাতায়ও। শুধু তাই নয়, মর্গে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রভাবের অভিযোগও উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, মর্গ তৈরির সময় যে ‘হেড-ডোম’ ছিলেন, তাঁকে মৌখিক নির্দেশে অন্য বিভাগে সরিয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।

এরপর চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে সেখানে আনা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে থাকা এক ডোমকে। সেখানে তাঁর মাধ্যমেই দুর্নীতি চালাত ‘সিন্ডিকেট’-এর মাথারা। ময়না তদন্তের জন্য আসা মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ করা ও সেলাই করে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে শ্মশান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ন্যূনতম হাজার দশ টাকার চুক্তি করা হত। প্রতি মাসে মর্গ থেকে সেই মোটা টাকা পৌঁছত সিন্ডিকেটে। অভিযোগ উঠছে, গত কয়েক মাস ধরে গভীর রাতেও মর্গের ভিতরের আলো জ্বলতে দেখা যেত। তদন্তকারীদের সন্দেহ, সেই সময়েই বের করা হত মৃতদেহ।

সেখানকার এক কর্মী জানিয়েছেন, “সন্ধ্যা হলেই মর্গে নিয়ে আসা হত মদের বোতল। সেখানে আমাদের মতো ছোটখাটো কর্মীদের কারও কিছু বলার সাহস ছিল না। বললেই হয় বদলি, নয় চাকরি যাওয়ার হুমকি দেওয়া হত।” কিন্তু এত রাতে মর্গ খোলা থেকে শুরু করে সিভিক ভলান্টিয়ার এবং হাসপাতালের কিছু কর্মীরা সেখানে কী কাজ করতে যেতেন সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে সিবিআই।