ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকা। সুতি, সামসেরগঞ্জ-সহ বেশ কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা, যার জেরে ঘটেছে হিংসা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য পুলিশ ছাড়াও নামানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় আধাসেনা এবং বিএসএফ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে দ্রুত মুর্শিদাবাদে পৌঁছে যায় আধাসেনা বাহিনী। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানালেও এলাকায় এখনও চাপা উত্তেজনা বজায় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার মালদহের বৈষ্ণবনগরের পারলালপুরে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের সঙ্গে দেখা করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। মুর্শিদাবাদ থেকে পালিয়ে আসা বহু পরিবার বর্তমানে পারলালপুর হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ শোনার পরই সুকান্ত রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস-কে চিঠি লিখে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।
বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক
চিঠিতে সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “যাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের সম্পত্তি লুঠ হয়েছে, তাঁদের জন্য অবিলম্বে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। রাজ্য সরকারের তরফে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।” রাজ্যপালের কাছে তিনি দাবি জানিয়েছেন, এই ঘটনার পেছনে থাকা দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি
সুকান্ত (Sukanta Majumdar) বলেন, “যাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙা হয়েছে, যাঁরা প্রাণ বাঁচাতে পরিবার নিয়ে আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। রাজ্য সরকার যেন অবিলম্বে উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে, সেই আবেদন করছি।” এছাড়াও তিনি আশ্রয়গ্রহণকারী পরিবারের মহিলাদের নিরাপত্তা এবং যথাযথ মানসিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানান।
আন্দোলন ও আইনি লড়াই একসঙ্গে
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত(Sukanta Majumdar) বলেন, “আমরা রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পথে নামব। গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন চলবে এবং পাশাপাশি আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব। সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়াই করব।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিজেপি এই ঘটনার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ স্তরে লড়াই চালাবে।
পুলিশের ভূমিকা ও ইন্টারনেট পরিষেবা
রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গুজব ছড়ানোর কারণে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হতে পারে। তাই বেশ কয়েকটি এলাকায় মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
ওয়াকফ আইন নিয়ে ক্ষোভ থেকে যে হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকায়, তা এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি আন্দোলনের রাস্তায় নামার কথা ঘোষণা করেছে। রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি আরও একবার রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং কতটা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।