পতিরামের এক পরিযায়ী শ্রমিকের অসহায় অবস্থার খবর সামনে আসতেই সক্রিয় হলো জেলা প্রশাসন। ভিনরাজ্যে আটকে পড়ে দিশেহারা কৃষ্ণকুমার বর্মন নামে ওই শ্রমিক শেষ পর্যন্ত ফোন করেন ‘দিদিকে বলো’য়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর বাড়ি ফেরার নতুন আশা।
কৃষ্ণকুমার বর্মন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরামের বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে তিনি ভিনরাজ্যে গিয়েছিলেন কাজ করতে। প্রথমদিকে সব ঠিকঠাক চললেও পরে নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। নিয়মিত কাজ না মেলার কারণে আয় কমতে থাকে। একইসঙ্গে দিন গুজরানের খরচ মেটাতে গিয়ে তিনি পড়ে যান ধার-দেনায়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সেই ঋণ শোধ না করলে বাড়ি ফেরা কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে।
অসহায় কৃষ্ণকুমার তখন ভাবেন কার কাছে সাহায্য চাইবেন। ঠিক সেই সময়ই মনে পড়ে ‘দিদিকে বলো’ উদ্যোগের কথা। রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি নিজেদের সমস্যা জানাতে পারেন। শেষমেশ তিনি ফোন করেন ওই হেল্পলাইনে এবং নিজের দুঃখ-কষ্টের কথা খোলাখুলি জানান।
খবরটি পৌঁছে যায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা দ্রুত উদ্যোগ নেন। কৃষ্ণকুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং তাঁর সমস্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়। বোঝা যায়, ভিনরাজ্যে থাকা অবস্থায় ঋণের চাপে কার্যত বন্দি হয়ে পড়েছেন তিনি। বাড়ি ফিরতে প্রয়োজন জরুরি অর্থসাহায্যের।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, কৃষ্ণকুমারকে প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার টাকা পাঠানো হচ্ছে, যাতে তিনি ওই ধার দেনা মিটিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে তিনি যাতে ফের এই ধরনের সমস্যায় না পড়েন, তার জন্যও আলাদা নজরদারির আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, রাজ্য সরকারের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুধু কথার কথা নয়, সত্যিই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক— যেকোনো মানুষ বিপদে পড়লে এই নম্বরে ফোন করে সরাসরি সাহায্য চাইতে পারেন। কৃষ্ণকুমারের মতো এক পরিযায়ী শ্রমিকের জীবনযাত্রা হয়তো একেবারে বদলে যাবে না, কিন্তু অন্তত সংকটকালে তিনি পেলেন নিরাপদ আশ্রয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণকুমারের পরিবার খবর পেয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বহুদিন ধরে ছেলে বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন, কিন্তু ধার-দেনার চাপে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। এবার সরকারি উদ্যোগে আর্থিক সাহায্য পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ঘটনাই দেখিয়ে দেয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির গুরুত্ব। রাজ্যের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক প্রায়ই বিপদে পড়েন, কিন্তু সব সময় সামনে এসে অভিযোগ জানানোর সাহস পান না। কৃষ্ণকুমারের মতো কেউ এগিয়ে এসে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন।
এই ঘটনার পর এলাকায় আলোড়ন পড়েছে। অনেকেই বলছেন, আজকের দিনে সরকারি হেল্পলাইন ও সরাসরি অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা না থাকলে কৃষ্ণকুমারের মতো মানুষদের সমস্যার সমাধান পাওয়া কঠিন হতো। প্রশাসনের তৎপরতা ও সহানুভূতিই তাঁকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করছে।
অতএব, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া পতিরামের কৃষ্ণকুমার বর্মনের গল্প একদিকে যেমন মানবিকতার উদাহরণ, অন্যদিকে তেমনই ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্পের কার্যকারিতার প্রমাণ। জীবনের কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত শাসনের পরিচয়— আর এই ঘটনাই সেই বাস্তবতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।