কলকাতা: শুধু কবি সুভাষ স্টেশনই নয়, রাইটসের করা সমীক্ষা রিপোর্টের ভিত্তিতে বদলাতে চলেছে আরও একাধিক মেট্রো স্টেশনের পরিকাঠামো (Metro Infrastructure)। সুড়ঙ্গের ভিতরে থাকা পুরনো স্টেশন থেকে শুরু করে মাটির উপর থাকা নবীন স্টেশনগুলোরও ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষা’ করে ফেলেছে রাইটস। ইতিমধ্যেই সেই সমীক্ষা রিপোর্ট জমা পড়েছে মেট্রো ভবনে। এখন সেটি পাঠানো হবে দিল্লির রেল বোর্ডে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত মিললেই সংস্কারের কাজে হাত দেবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোর এক কর্তার কথায়, “গত বছর থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই রাইটসকে দিয়ে স্ট্রাকচারাল অডিট করানো হয়।” বিশেষ করে কবি সুভাষ থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত যে মেট্রো রুটটি আদিগঙ্গার উপর দিয়ে গিয়েছে, সেখানে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে প্রতিটি পিলারের স্থায়িত্ব। কবি সুভাষ থেকে গীতাঞ্জলি স্টেশনের মধ্যে একাধিক পিলারে ‘চিড়’ ধরা পড়েছে আগেই।
কিন্তু তখন বিষয়টি গুরুত্ব না পাওয়ায় এখন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে যাত্রীদের। আপ প্ল্যাটফর্ম বসে যাওয়ায় আপাতত পুরো কবি সুভাষ স্টেশন ৯ মাসের জন্য বন্ধ। চলছে শেড খোলার কাজ এবং প্ল্যাটফর্ম ভেঙে নতুন করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি। এর জেরে দক্ষিণ শহরতলির মানুষের যাতায়াতে ব্যাপক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
নিউ গড়িয়া ও কবি সুভাষ সংলগ্ন টোটো স্ট্যান্ডগুলিও কার্যত ফাঁকা। যাত্রীদের এখন শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন অবধি এসে ট্রেন ধরতে হচ্ছে। ফলে খরচ ও সময় দুই-ই বেড়েছে।
এদিকে শুধু কবি সুভাষ নয়, কবি সুভাষ থেকে উত্তম কুমার পর্যন্ত সব মাটির উপর নির্মিত স্টেশনেই পরিকাঠামোগত ত্রুটি ধরা পড়েছে। বয়স মাত্র ১৫ বছর হলেও বিভিন্ন স্টেশনে ফাটল, চিড়, অবকাঠামোগত দুর্বলতা নজরে এসেছে।
রাইটস তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে কোথায় কী ধরনের প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সংস্কার সম্ভব, তাও বিশদে জানিয়েছে। সেই ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট ইতিমধ্যেই তৈরি। এখন শুধু দিল্লির রেল বোর্ড থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলেই সেই কাজ শুরু করবে কলকাতা মেট্রো।
কিন্তু এর মধ্যেই যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা হল, লাইনের অভিমুখ বদল। বর্তমানে কবি সুভাষ স্টেশনেই ট্রেন আপ ও ডাউন লাইনে বদল করে। কিন্তু স্টেশনটি ভাঙার সময় ট্র্যাকে ক্ষতি হলে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকেও পরিষেবা চালানো সম্ভব নাও হতে পারে।
তাই শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনকেও ‘প্রান্তিক স্টেশন’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এখানেই রেক ঘোরানোর জন্য পৃথক পয়েন্ট, নতুন সিগন্যাল বসানো, ট্র্যাকের আধুনিকীকরণ ইত্যাদি প্রয়োজন। পাশাপাশি দরকার কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির ছাড়পত্রও।
সব মিলিয়ে ৪০ বছর পার করা কলকাতা মেট্রোর লাইফলাইনকে আরও মজবুত করতে এবার একযোগে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে সংস্কার যত জরুরি, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যাত্রী পরিষেবায় সাময়িক সমস্যা মেটানো।