আদিত্য ঘোষ, শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর লোকাল থেকে: শিয়ালদহ স্টেশনে তখন থিকথিকে ভিড়। ঘড়ির কাঁটায় প্রায় আটটা। ঘেমে স্নান সেরেছেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী। মেন লাইনের ট্রেন (Kolkata Local Train) প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা লেটে শিয়ালদহ স্টেশনে ঢুকছে। যাত্রীদের মুখে বাংলা খিস্তির সমারোহ। একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, “মেনলাইনে শেষ ট্রেন কী গিয়েছে?” তিনি উত্তরে খিস্তি দিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল সাতটার যে ট্রেন শিয়ালদহ ছেড়ে যাওয়ার কথা চিল সেই ট্রেন শিয়ালদহ ঢুকেছে প্রায় আটটা।
রেল সূত্রে খবর, শিয়ালদহ স্টেশনে লাইন সম্প্রসারণ সহ অন্যান্য কাজগুলি মিটে গিয়েছে রবিবার নির্ধারিত সময়ের আগেই তবুও সোমবার প্রায় সারাদিন ব্যাপক ট্রেন লেট নিয়ে যাত্রী ক্ষোভ দেখা গেল। শুধু তাই নয়, সঠিক তথ্য দিতে রেল অপারগ বলে অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীদের একাংশ। তবুও রেল তরফে দাবি করা হচ্ছে যে, এই সমস্যা খুব সামান্য এবং অধিকাংশ ট্রেন সময়েই চলছে। কোনও ট্রেন বাতিল করা হয়নি।
কৃষ্ণনগর যাচ্ছেন অতীশ সরকার, কলকাতার একটি বেসরকারী অফিসের কর্মী জানালেন, ” এটা আজ বলে নয়, দেখুন আরও সাতদিন চলবে।” শান্তনু সেন নামক নিরাপত্তা অফিসের কর্মীর কথায়, ” ভোট মিটে গিয়েছে তো তাই এখন এইসব নাটক করছে। নয়ত ব্যালোটে জবাব দিয়ে দিতাম। কলেজ ফেরত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতুল সাহা রেলের তুমুল সমালোচনা করে বললেন, ” এইভাবে কতদিন সহ্য করতে হবে? আমার বাড়িতে অসুস্থ মা আছেন। কতক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছি, ট্রেন নেই।” ঘড়ির কাঁটা আটটা এগারো, এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সাতটা পঁয়ত্রিশ মিনিটের কৃষ্ণনগর সিটি লোকাল ছাড়ল। যদিও তার আগের কল্যাণী এবং লালগোলা দাঁড়িয়ে রইল শিয়ালদহে। কোন ট্রেন আগে ছাড়বে এবং কোনটা পরে, কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না রেলের তরফে।
যদিও রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রকে ফোন করা হলে তিনি উত্তর দেননি। তবে শিয়ালদহ ছাড়ার পরে একাধিকবার ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, কাজ করছে না ট্রেন কোথায় রয়েছে সেই দেখার এপ্লিকেশন। মানে এক কথায় সোমবার কার্যত অচল শিয়ালদহ মেন শাখা। সপ্তাহের প্রথম দিনে এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন বলে ভাবেনি অনেকেই। ব্যারাকপুরে একটি নার্সিংহোমে যাওয়া এক যাত্রীর কথায়, ” আমার এক পরিচিত ভর্তি নার্সিংহোমে, সেই সন্ধে থেকে দাঁড়িয়ে। কোনও ট্রেন পাচ্ছি না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রেন ড্রাইভার জানিয়েছেন যে, সদ্য সমাপ্ত হওয়া লাইন সম্প্রসারণ কতটা পরীক্ষা মূলক ভাবে সক্রিয় সেই নিয়ে সন্দিহান রেল। তাই সিগন্যালের গতি ধীর। বিষয়টা খুব সাবধানে করা হচ্ছে তাই সময় লাগছে। এমনি কোনও অসুবিধা নেই। তবে অনেকেরই দাবি এই নিয়ে রেলের আগাম বিবৃতি দেওয়া উচিত ছিল।