হলে প্রত্যেকদিন দেখাতেই হবে বাংলা ছবি! নির্দেশ মমতার

বাংলা ছবি ও ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা কাটাতে এবার এগিয়ে এলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (Mamata)। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচার ও প্রসারের জন্য একটি অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন…

Mamata new decesion

বাংলা ছবি ও ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা কাটাতে এবার এগিয়ে এলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (Mamata)। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচার ও প্রসারের জন্য একটি অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। রাজ্যের প্রতিটি সিনেমা হলে বছরের ৩৬৫ দিনই বিকেল তিনটে থেকে রাত নয়টার মধ্যে, যাকে নতুন ‘প্রাইম টাইম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অন্তত একটি বাংলা ছবি দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হল বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা, নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত করা। এই উদ্যোগ বাংলা চলচ্চিত্রের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আবার সমালোচক মহলের একাংশ বলেছেন মমতা বাংলা ছবিকে ব্যবহার করে ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে চাইছেন।

   

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা সংস্কৃতি ও শিল্পের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই নতুন নির্দেশিকা অনুসারে, রাজ্যের সকল মাল্টিপ্লেক্স এবং একক-স্ক্রিন সিনেমা হলগুলিকে প্রতিদিন বিকেল তিনটে থেকে রাত নয়টার মধ্যে কমপক্ষে একটি শো তে বাংলা ছবি দেখাতেই হবে।

এই সময়সীমাকে ‘প্রাইম টাইম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কারণ এই সময়ে দর্শকদের উপস্থিতি সর্বাধিক থাকে। এই পদক্ষেপের ফলে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং নির্মাতারা আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করছে শিল্পী মহল।এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজ্য সরকার বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত করতে চায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হিন্দি এবং ইংরেজি চলচ্চিত্রের প্রভাবে বাংলা সিনেমার দর্শক সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থান বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে, বাংলা সিনেমার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এই নির্দেশিকা বাংলা চলচ্চিত্রকে পুনরায় প্রাধান্য দেওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ ফিল্ম সেন্টারের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই নির্দেশিকা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য একটি বড় সুযোগ। প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি প্রদর্শনের ফলে দর্শকরা নতুন এবং পুরনো বাংলা সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট হবেন। এটি নির্মাতাদেরও নতুন ধরনের গল্প বলার জন্য উৎসাহিত করবে।” এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতারা উপকৃত হবেন, কারণ তাঁদের কাজ বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছাবে।

Advertisements

বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের অভিনেতা ও নির্মাতারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রখ্যাত অভিনেতা সৌরভ দাস বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ বাংলা সিনেমার জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি দেখানোর ফলে দর্শকরা আমাদের গল্পের প্রতি আরও আকৃষ্ট হবেন।” একইভাবে, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় মনে করেন, এই নির্দেশিকা বাংলা সিনেমার সৃজনশীলতা এবং বৈচিত্র্যকে আরও উৎসাহিত করবে।

তবে, এই নির্দেশিকা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও থাকতে পারে। সিনেমা হল মালিকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, প্রাইম টাইমে বাংলা ছবি প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা তাদের ব্যবসায়িক লাভের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি বাংলা ছবির দর্শক সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয়।

একই ঠিকানায় বহু ধর্মের ভোটার! ‘অস্বাভাবিকতা’ নিয়ে অভিষেককে কড়া প্রশ্ন অনুরাগের

এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাংলা চলচ্চিত্রের প্রচারে সিনেমা হলগুলিকে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষ ভর্তুকি এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদ্যোগ বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এটি শুধুমাত্র বাংলা সিনেমার প্রচারই নয়, বাংলা সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।