Mamata Voices Strong Opposition to ‘Divide and Rule’ in Bengal, Raises Concerns Over Waqf
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) সম্প্রতি ওয়াকফ সম্পত্তি ইস্যু নিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে কিছু বলতে চাই। আমি জানি, ওয়াকফ সম্পত্তির বিষয়ে আপনারা আঘাত পেয়েছেন, কিন্তু আমার ওপর ভরসা রাখুন—বাংলায় এমন কিছু হবে না যা ভাগ করে শাসন করার পথ খুলে দেয়। এই বার্তা ছড়িয়ে দিন যে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে বাঁচতে হবে… দিদি আছে, দিদি আপনাদের আর আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। আমরা যদি এক থাকি, তাহলে সব জিততে পারি—আমরা গোটা বিশ্ব জয় করতে পারি।”
ওয়াকফ (সংশোধন) বিল, ২০২৪
মমতার (mamata) এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ওয়াকফ (সংশোধন) বিল, ২০২৪ নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই বিলটি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সংসদে উত্থাপিত হয়েছে, যা ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে এই বিল নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, এটি তাদের ধর্মীয় ও সম্পত্তি সংক্রান্ত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য রাজ্যের সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
জঙ্গিপুরে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, মোতায়েনপুলিশ বাহিনী, জারি ১৬৩ ধারা
মমতা (mamata) আরও জোর দিয়ে বলেন
কলকাতায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য রাখার সময় মমতা আরও জোর দিয়ে বলেন, বাংলা সব সময় সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, “এখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান—সবাই একসঙ্গে থাকে। আমরা কখনও ভাগাভাগির রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনি। বাংলায় যতদিন আমি আছি, ততদিন কেউ আপনাদের অধিকারে হাত দেবে না।” তাঁর এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক মহল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটি পরোক্ষ আক্রমণ হিসেবে দেখছে।
ওয়াকফ বিল নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এই প্রস্তাব যে, ওয়াকফ সম্পত্তির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হবে এবং এর ব্যবস্থাপনায় অমুসলিম প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বিরোধী দলগুলো, যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসও রয়েছে, এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলছে যে, এটি সংবিধানে প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। মমতা এর আগেও এই বিলের বিরোধিতা করেছেন এবং বলেছেন যে, এটি সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
‘দিদি আছে, দিদি রক্ষা করবে’
মমতার (mamata) বক্তব্যে ‘দিদি আছে, দিদি রক্ষা করবে’—এই বাক্যটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে একটি আবেগঘন আশ্বাস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা একসঙ্গে থাকলে কেউ আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। আমাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি।” তিনি সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে এই বার্তাও
দিয়েছেন যে, তারা যেন গুজব বা ভয়ের কাছে নতি স্বীকার না করে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা মমতার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। একজন স্থানীয় মৌলবি বলেন, “মমতা দিদি সব সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ওয়াকফ বিল নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিন্তু তাঁর কথায় ভরসা পাচ্ছি।” তবে, বিরোধী দল বিজেপি এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেন, “মমতা সংখ্যালঘুদের ভোট পাওয়ার জন্য এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি সম্প্রীতির কথা বলেন, কিন্তু তাঁর রাজনীতি ভাগাভাগির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।”
ওয়াকফ সম্পত্তি বাংলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্পর্শকাতর বিষয়। রাজ্যে প্রচুর মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান এই সম্পত্তির অধীনে পরিচালিত হয়। মমতা সরকার এর আগেও সংখ্যালঘু কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইমামদের ভাতা প্রদান ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন। তাঁর এই বক্তব্য সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে মমতার এই বক্তব্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে তাঁর ‘বিশ্ব জয়’ করার উল্লেখকে প্রতীকীভাবে গ্রহণ করে বলছেন, এটি ঐক্যের শক্তির উপর জোর দেয়। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “দিদি ঠিক বলেছেন, আমরা এক থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।” তবে, বিরোধী শিবিরের সমর্থকরা এটিকে ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা
মমতার এই বক্তব্য কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ওয়াকফ বিলটি বর্তমানে সংসদীয় কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই বিলের বিরোধিতায় অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। মমতার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি এই ইস্যুতে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই ঘটনা বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আলোড়ন ফেলেছে। মমতার ‘দিদি আছে’ বার্তা সংখ্যালঘুদের মধ্যে কতটা আস্থা জাগাতে পারে, তা সময়ই বলবে। তবে, তাঁর এই অবস্থান রাজ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে।