মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata-Abhishek) দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু কৌশলী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata-Abhishek) লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ঘোষণা করার ঘটনাকে অনেকেই দেখছেন এক ঢিলে বহু পাখি মারার মতো একটি কৌশল হিসেবে। তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেই জানিয়েছেন, সর্বসম্মতভাবে অভিষেককে এই পদে আনা হচ্ছে। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিক বার্তা ও ফলাফল নিয়ে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকেই মমতার (Mamata-Abhishek) পাশে ছিলেন একঝাঁক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী—যাদের অধিকাংশই এসেছিলেন যুব কংগ্রেস থেকে। সঙ্গে ছিলেন কিছু প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। এঁরাই মমতার প্রথম দিকের ‘কিচেন ক্যাবিনেট’। পরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন, দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই ও নির্বাচনী সাফল্যের ফলে তৃণমূল রাজ্যের শাসনক্ষমতা দখল করে। তখন দলের প্রভাবশালী চেহারা তৈরি হয় মূলত ওই পুরনো সহকর্মীদের কেন্দ্র করে—যাদের মধ্যে ছিলেন ববি হাকিম, শোভন চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, মদন মিত্র প্রমুখ।
তবে ক্ষমতায় থাকা দল মানেই সেখানে যোগদানের আগ্রহ বেড়ে যায়। তৃণমূলও তার ব্যতিক্রম নয়। নবীন প্রজন্মের রাজনীতিবিদরা ধীরে ধীরে দলীয় কাঠামোয় জায়গা পেতে শুরু করেন। প্রথমে শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন এই নবীন ব্রিগেডের মুখ, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে আসেন কেন্দ্রীয় ভূমিকায়। মমতার (Mamata-Abhishek) হাত ধরেই অভিষেক(Mamata-Abhishek) (Mamata-Abhishek) রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, লোকসভায় প্রার্থী হন এবং পরে যুব তৃণমূলের দায়িত্ব পান।
এরপর থেকেই দলের ভেতরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দুটি ক্ষমতার কেন্দ্র—একদিকে প্রবীণ ব্রিগেড বা ‘ওল্ড গার্ড’, অন্যদিকে অভিষেককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নবীন নেতৃত্ব। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য ও অন্দরকলহের গুঞ্জন রাজনীতির অলিন্দে শোনা যেতই। মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের পর অভিষেক আরও নিরঙ্কুশ হয়ে ওঠেন সংগঠনে। তবে সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রবীণ-নবীন টানাপোড়েন।
এমন পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata-Abhishek) বারবার স্পষ্ট ঘোষণা ছিল—দলে শেষ কথা তাঁরই। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তিনি কখনও সরাসরি পক্ষপাত করেননি বলে প্রকাশ্যে দাবি করা হলেও, অভিষেকের ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব প্রমাণ করেছে যে মমতার আস্থাভাজন হিসেবে তাঁর অবস্থান দৃঢ়।
এই প্রেক্ষাপটে লোকসভায় দলনেতার পদে অভিষেকের নিয়োগ বহুমুখী বার্তা বহন করে। প্রথমত, এতে নবীন নেতৃত্বের স্বীকৃতি মিলল আনুষ্ঠানিকভাবে। দ্বিতীয়ত, প্রবীণ ব্রিগেডকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হল—দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ধারা কোন দিকে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া ব্লক’-এর ভেতরেও অভিষেককে গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হল, যা জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রোফাইল বাড়াবে।
সবচেয়ে বড় কথা, এতে দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য মমতার নিয়ন্ত্রণে রইল। প্রবীণ নেতারা বুঝে গেলেন—মমতার পরবর্তী উত্তরসূরি কে হতে পারেন, আর নবীন নেতারা পেলেন অনুপ্রেরণা। কেউ খুশি, কেউ অখুশি—তবুও মেনে নিতে হবে সকলে, কারণ তৃণমূল কংগ্রেসে “মমতা সত্য, তাহার উপরে নাই” এই সূত্র এখনও অটুট।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মমতার এই পদক্ষেপ কেবল সংগঠনের বর্তমান শক্তি মজবুত করল না, ভবিষ্যতের জন্যও রণকৌশল নির্ধারণ করে দিল। অভিষেককে সামনে রেখে লোকসভায় তৃণমূলের কণ্ঠ আরও দৃঢ় হবে, আর মমতার কৌশলগত চাল রাজ্যের রাজনীতিতে আগামী দিনে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে।