আরজি কর কাণ্ডের নৃশংস ঘটনা জনসমক্ষে আসার পরে সেই কলেজের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা থেকে শুরু করে অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা বিচারের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এমনকি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতিও চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এর আগে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে কাজে ফেরার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। তবে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের পর তিনি চিকিৎসকদের কাজে ফেরার বার্তা দিয়ে সাধারণ মানুষের হয়রানির বিষয়টিও তুলে ধরলেন।
এদিন নবান্ন থেকে ঠিক কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী? হাসপাতালে কর্মবিরতি চালালেও অনেক চিকিৎসকরা যে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন সেই বিষয়টি নিয়ে সোমবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নবান্নে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান, “অনেকে এখানে কাজ করছেন না, প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে কাজ করছেন। এটা কি সত্যি?” স্বাস্থ্যসচিব মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে সন্মতি দিয়ে তথ্য পেশ করে বলেছেন, এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রায় সাত লাখ রোগী বহির্বিভাগে পরিষেবা পাননি। হাসপাতালে প্রায় ৭০ হাজার রোগীকে ইন্ডোর অ্যাডমিশনের পরিষেবা দেওয়া যায়নি। সাত হাজারের বেশি পূর্ব পরিকল্পিত অস্ত্রোপচার করা যায়নি। সেইসঙ্গে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে ক্যাথ ল্যাবে পরিষেবা দেওয়া যায়নি। এর পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান জানার জন্য ব্লক স্তর থেকে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “কোনও মানুষ যাতে পরিষেবার অভাবে মারা না যান, তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”
এদিকে যথার্থ পরিষেবা না পেয়ে এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব নিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানিয়ে বলেছেন, “পুলিশকে অ্যাকশন নিতে না করেছি। কিন্তু দয়া করে মানুষকে পরিষেবা দিন।” তবে সম্প্রতি টালা থানার ওসি একাধিক নার্সিংহোমে ঘুরেও ভর্তি হতে পারেননি। তাই যাঁরা ভর্তি নিতে অস্বীকার করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ঠিক কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিবের কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
টালা থানার ওসি ভর্তি নিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে মমতা বলেছেন, “চারটি (বেসরকারি হাসপাতালের) নাম আমার কাছে রয়েছে। পুলিশের একজন ওসি তোমার কাছে রোগী হিসাবে গিয়েছে। তুমি তাকে ভর্তি নাওনি। এদের কথা মনে রাখতে হবে।” প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সমস্ত হাসপাতালের অধ্যক্ষ, সুপার, সিনিয়র এবং জুনিয়র চিকিৎসক ও পুলিশকে নিয়ে বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন মুখমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, যদি দাবিদাওয়া নিয়ে ডাক্তাররা কথা বলতে চান তাহলে তিনি কথা বলতে বসতে রাজি বলে জানিয়েছেন।