শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় — একুশে জুলাই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এক তুমুল আবেগের দিন। ১৯৯৩ সালের সেই রক্তাক্ত দিন, পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন তৃণমূল কর্মী। তাদের স্মরণেই প্রতিবছর এই দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে রাজ্যের শাসকদল। বছরের পর বছর ধরে এই দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূলের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও জয়ের কাহিনি।
এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ২০২৫ সালের একুশে জুলাই ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে। কর্মীরা জড়ো হচ্ছেন রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে, উৎসাহের সঙ্গে ধর্মতলার পথে পা বাড়াচ্ছেন হাজার হাজার তৃণমূল সমর্থক। তার আগের দিন, অর্থাৎ রবিবার সন্ধ্যায়, শহিদ দিবসের মূল মঞ্চ ধর্মতলায় ঘুরে দেখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের হাতে একবার দেখে নিলেন প্রতিটি প্রস্তুতি। পোস্টার, ব্যানার, মঞ্চ নির্মাণ, সাউন্ড সিস্টেম, কর্মীদের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থাপনা—সব খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজখবর নিলেন।
তবে শুধু তদারকি নয়, এই পরিদর্শনের সময় আবেগেও ভেসে গেলেন মমতা। চোখে-মুখে ফুটে উঠল স্মৃতির আবছা ছায়া। মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন,
“এটা আমাদের আত্মার অনুষ্ঠান। শুধু রাজনীতি নয়, এটা লড়াইয়ের ইতিহাস, বলিদানের ইতিহাস। প্রতিটা বছর আমি এখানে এসে যেন ফিরে যাই সেই ১৯৯৩ সালের দিনটায়।”
তাঁর চোখে জল দেখা গেল সেই মুহূর্তে। পাশে থাকা দলের অন্য নেতারাও নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন। যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন সবাই। কারণ একুশে জুলাই মানেই তৃণমূলের আত্মপরিচয়, এক গভীর বেদনার সঙ্গে লড়াইয়ের চেতনার সমাহার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়,
“বৃষ্টি হোক, ঝড় হোক, আমরা থামব না। শহিদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানাতেই হবে। ধর্মতলার এই মাটি আমাদের লড়াইয়ের সাক্ষী। নতুন প্রজন্ম যেন জানে কীভাবে ত্যাগের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে এই দল আজ রাজ্যের মানুষের মন জয় করেছে।”
প্রস্তুতির খুঁটিনাটি ঘুরে দেখার পর মুখ্যমন্ত্রী কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেন। শহরের নানা প্রান্ত থেকে আগত কর্মীরা তাঁকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। কেউ বললেন, “দিদি এলেন, মানে সব ঠিক আছে।” কেউ আবার ফুলের মালা হাতে এগিয়ে এলেন তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে। মুখ্যমন্ত্রীও হাসিমুখে সকলের সঙ্গে কথা বলেন, মনোবল বাড়িয়ে দেন।
এদিন সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, এবারের শহিদ দিবসের বার্তা হবে “গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই”। তিনি বলেন,
“যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একুশের এই মঞ্চ থেকেই বার্তা যাবে। শহিদদের আত্মত্যাগ বিফলে যেতে পারে না।”
ধর্মতলার মূল মঞ্চে ইতিমধ্যেই আলো, মাইক, ব্যারিকেড, নিরাপত্তা সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শহরের নানা প্রান্তে সাজো সাজো রব। রাজ্যের নানা জেলা থেকে ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছেন হাজার হাজার তৃণমূল সমর্থক।
আবেগ, ইতিহাস আর সংগ্রামের এই দিনে তৃণমূল কংগ্রেস আবার প্রমাণ করতে চাইছে—এই দল শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য তৈরি হয়নি, এটি তৈরি হয়েছে মানুষের লড়াইয়ের জমিতে।
এবারও শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে সেই একই বার্তা পৌঁছে দিতে প্রস্তুত মমতা ও তাঁর দল। বৃষ্টি, ঝড়, বাধা কিছুই তাদের থামাতে পারবে না — একুশে জুলাই যেন সেই সংকল্পের দিন।