জেলা থেকে শহর—তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উত্তাল বাংলা, রাজপথে নামছেন মমতা ও অভিষেক

ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর লাগাতার হেনস্তা এবং বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে আজ বৃহত্তর প্রতিবাদের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয়…

Mamata Elevates Abhishek Banerjee to Lok Sabha Leader, Signaling Consolidation of Leadership and Tighter Coordination Within TMC"

ভিনরাজ্যে বাঙালিদের উপর লাগাতার হেনস্তা এবং বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে আজ বৃহত্তর প্রতিবাদের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আজ দুপুরে রাজপথে নামছেন এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাতে।

দুপুর একটায় কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হবে প্রতিবাদ মিছিল। সেখান থেকে মিছিল এগিয়ে যাবে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। মিছিলে শামিল হবেন রাজ্যের মন্ত্রীরা, সাংসদ-বিধায়করা, ছাত্র-যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা, বুদ্ধিজীবী সমাজ ও নানা স্তরের মানুষ। মিছিল শেষে ডোরিনা ক্রসিংয়ে পথসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই তিনি তুলে ধরবেন এই প্রতিবাদের কারণ, এবং কীভাবে বারবার বাংলা ও বাঙালিকে লক্ষ্য করে এক বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী আক্রমণ করছে বলে তাঁর দাবি।

   

কড়া নিরাপত্তা ঘিরে মিছিল

এই কর্মসূচিকে ঘিরে শহরে জারি করা হয়েছে চূড়ান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ১৫০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন রাস্তায়। গোয়েন্দা বিভাগের নজরদারিও থাকবে গোটা এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ট্র্যাফিক পয়েন্টগুলি থেকে শুরু করে কলেজ স্কোয়ার, ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সকাল থেকেই এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ বাহিনী। রাস্তার দুই পাশে থাকবে ব্যারিকেড। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে কিছু রুট সাময়িকভাবে ঘুরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

জেলায় জেলায় কর্মসূচি

শুধু কলকাতা নয়, এদিন জেলায় জেলায়ও বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রতিটি জেলা সদর শহরে আজ বিকেলে মিছিল বা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। দলের জেলা নেতৃত্বদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের বার্তা জনসমক্ষে তুলে ধরতে। বেশ কিছু জেলাতে ছাত্র ও যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে মশাল মিছিল ও মৌন প্রতিবাদেরও আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিবাদের পেছনে যে প্রেক্ষাপট

Advertisements

সম্প্রতি একাধিক ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাঙালিদের উপর নানা হেনস্তার ঘটনা সামনে এসেছে। কোথাও ভাষা নিয়ে, কোথাও রাজনৈতিক পরিচিতি নিয়ে, কোথাও আবার শুধুমাত্র জাতিগত কারণে বাঙালি শ্রমিকদের অপমান ও শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। এই সব ঘটনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে একাধিক বার বলেছেন, “বাংলার মানুষকে বারবার টার্গেট করা হচ্ছে। বাঙালিদের যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

তৃণমূলের বার্তা: ‘বাংলাকে হেনস্থা সহ্য করা হবে না’

আজকের কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেস স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে— বাংলা আর চুপ করে থাকবে না। বাংলা ও বাঙালির সম্মান রক্ষায় রাজ্যের শাসক দল সর্বদা সক্রিয় থাকবে। এই প্রতিবাদ শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ও জাতিগত আত্মসম্মানের লড়াই বলেই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

অন্যদিকে বিরোধীদের একাংশ এই কর্মসূচিকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে কটাক্ষ করলেও, রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। বহু মানুষ এই ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে মত প্রকাশ করছেন।

সব মিলিয়ে আজকের দিনটি রাজ্য-রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে কী বার্তা উঠে আসে, সেটাই এখন সবার নজরে।