বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বিস্ফোরক মমতা খুঁজছেন নয়া প্ল্যান?

নীতি আয়োগের বৈঠকে বলতে সময় না দেওয়ার অভিযোগে বৈঠক বয়কট করেছেন মমতা (Mamata Banerjee) । তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি…

mamata Banerjee is tensed on bjp proposal about special preference to north bengal

নীতি আয়োগের বৈঠকে বলতে সময় না দেওয়ার অভিযোগে বৈঠক বয়কট করেছেন মমতা (Mamata Banerjee) । তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি (Mamata Banerjee) । বাংলার বঞ্চনার বিষয়ে ঠিকঠাক মতো বলতে চেয়েও বলতে পারেননি বলছেন মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) । এদিন বারবার সেই আক্ষেপ ঝরে পড়েছে মমতার গলায়।

আর সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বাংলা ভাগ অর্থাৎ বঙ্গের বিভাজন সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ মমতার মুখে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যা যথেষ্ট ইঙ্গিত বাহী বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ঠিক এই বৈঠকের আগে আগেই উত্তরবঙ্গের তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার একটি প্রস্তাব রেখেছিলেন কেন্দ্র সরকারের কাছে ।

   

যেখানে বলা হয়েছে উত্তরবঙ্গ কে উত্তর পূর্বের রাজ্য গুলির মধ্যে ধরেই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হোক। যা নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা ভাগ বা বঙ্গভঙ্গের চক্রান্তের অভিযোগ এনেছে। এবার নীতি আয়োগ এর বৈঠক বয়কট করে কলকাতায় ফিরে ক্ষুব্ধ মমতাও এই নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।

‘মিসলিড’ করছেন মমতা? মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রকেরই অভিযোগে তোলপাড় দিল্লি!

ক্ষুব্ধ মমতার অভিযোগ বাংলাদেশের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের তিস্তা চুক্তিকে নিয়ে। কেন রাজ্যের মতামত তাতে নেওয়া হয়নি সেই নিয়ে কার্যত ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তার প্রশ্ন, জল না পেলে যে উত্তরবঙ্গ ভাগের কথা বলছেন বিজেপির নেতারা, সেই উত্তরবঙ্গের পানীয় জলের কি ব্যবস্থা হবে? মমতার বক্তব্য, বর্ষাকালে তিস্তা ভোগায়, কিন্তু বাকি সারাটা বছর জলের জোগান দিয়ে উত্তরবঙ্গ কে বাঁচিয়ে রাখে এই তিস্তাই। সেই তিস্তার জল রাজ্যকে এড়িয়ে বাংলাদেশকে দিয়ে দিলে, যে উত্তরবঙ্গ নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে, সেই উত্তরবঙ্গের কী হবে?

শুধু উত্তরবঙ্গ নিয়েই যে মমতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তা নয়, সমতলের বন্যা নিয়েও মমতা এ দিন তার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। দামোদরের ড্রেজিং দীর্ঘদিন করা হয় না, এই অভিযোগ তুলেছেন মমতা। হাওড়া হুগলি বাঁকুড়া এবং মেদিনীপুরের বন্যার জন্য দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন ক্ষুব্ধ মমতা।

কিন্তু মমতার এই অভিযোগগুলোকে ঠিক এই মুহূর্তেই আবারও মনে করিয়ে দেওয়াটা সুচিন্তিত পরিকল্পনা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে নিশিকান্ত দুবে বাংলা এবং বিহারের একাংশ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন। অপরদিকে কোচবিহারে রাজ্যসভার সংসদ তথা কোচবিহারের অনন্ত মহারাজ গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য তৈরি নিয়ে দাবি জানিয়েছেন রাজ্য সভায়। সুকান্তের উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিশেষ প্রস্তাব তো আছেই।

লক্ষণীয়ভাবে উত্তরবঙ্গের জমিতে এখন অব্দি পদ্মেরই রমরমা চলছে। ২৪ এর লোকসভাতেও পদ্ম বন ছারখার করতে পারেনি তৃণমূল। তার উপরে সুকান্তের এহেন প্রস্তাবে উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন অনেকে। ২৬-এর বিধানসভার কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই বিজেপির মুখে বলা কথা এবং কাজের মধ্যে ফারাক দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মমতা?

ফের বাংলায় ভোট? পুজো মিটলেই ১৫ পুরসভায় নির্বাচনের সম্ভাবনা

সে সম্ভাবনাই সব থেকে বেশি বাস্তবযোগ্য বলে মনে হচ্ছে অভিজ্ঞ মহলের। নীতি আয়োগের বৈঠকে বলতে না দেওয়ার অভিযোগ, জল নিয়ে উত্তরবঙ্গের সাথে বঞ্চনা, রাজ্যের প্রতি কেন্দ্র সরকারের বাজেট বঞ্চনা। এই ত্রিফলাতেই কি তাহলে বিজেপির উত্তরবঙ্গ প্ল্যান কে ভোঁতা করতে চাইছেন মমতা?

অনেক রাজনৈতিক মহলের মতে সেটা খুব একটা অবাস্তব কল্পনা নয়। কারণ সঠিক সময়ে সঠিক ইস্যু বাছার রাজনীতিতে এখনও বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ধারে কাছে কেউ নেই। অন্তত এমনটাই বঙ্গের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের একাংশের অভিমত।