দুর্গাপুরে বিজেপির সভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, “বাংলায় পরিবর্তন এলেই আসল উন্নয়ন হবে।” তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছিল শিল্পের অভাব, বেকারত্ব, দুর্নীতি-সহ একাধিক ইস্যু। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় ‘আসল পরিবর্তন’-এর আশ্বাস দেন তিনি। তারই পাল্টা জবাব এল ২১ জুলাইয়ের তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) মুখে। নাম না করে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রসঙ্গ তুলে মোদিকে তীব্র আক্রমণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বলছে বাংলায় পরিবর্তন হলেই উন্নয়ন হবে! আপনিই তো বলেছিলেন দু’কোটি চাকরি দেবেন, ১৫ লক্ষ টাকা করে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে দেবেন, কালো টাকা ফেরাবেন— সেই সব কোথায় গেল? বরং উল্টে একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিলেন, বাংলার বাড়ি তৈরির প্রকল্প বন্ধ, গ্রামের রাস্তা নির্মাণ বন্ধ। আপনারাই তো মানুষকে জেলে পুরে দিচ্ছেন।”
তাঁর বক্তব্যে বাংলা ভাষার ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আক্রমণ’ নিয়েও সরব হন মমতা। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বললে আপনাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়! বাংলা ভাষার প্রতি আপনার এত অসহিষ্ণুতা কেন? বাংলা ভাষা কি আপনাদের শত্রু হয়ে গেল?” বাংলার সংস্কৃতি ও ভাষার মর্যাদা রক্ষার শপথ নেন তিনি, এবং দলের কর্মীদেরও সেই পথে চলার বার্তা দেন।
তৃণমূল সুপ্রিমোর আরও কটাক্ষ, “২০২৬-এর পর আমি দেখবো, তোমরা কোথায় থাকো! বাংলায় পরিবর্তনের কথা বলছো, কিন্তু এই পরিবর্তনের ঢেউ আবার দিল্লিতেই না পৌঁছে যায়! আজ ২১ জুলাইয়ের এই সভা থেকেই সেই পরিবর্তনের ভিত রচিত হলো।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, দিল্লির মসনদ দখলের কথাও বারবার উল্লেখ করছেন তিনি। যা থেকে পরিষ্কার, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন এবং ২০২৬-এর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন— দু’টির প্রতিই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
এদিনের বক্তৃতায় তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, “বিজেপি বাংলা দখল করতে চায়, কিন্তু বাংলার মানুষ বঞ্চনার জবাব দিতে জানে। বাংলার মাটি দুর্নীতিমুক্ত, গর্বের। দিল্লি থেকে শাসন নয়, বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জবাব বিজেপির বিরুদ্ধে একটি কৌশলী রাজনৈতিক বার্তা, যা শুধু রাজ্যের মানুষের আবেগ নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। বিজেপির পরিবর্তনের ডাককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই শুরু হয়ে গেল ২০২৬-র লড়াইয়ের প্রস্তুতি। এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন সুর বেঁধে দিল।