দেশে মূল্যবৃদ্ধির তীব্র চাপ মানুষের জীবনযাত্রাকে একেবারে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। একের পর এক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ানোর ফলে দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো তীব্র অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। সম্প্রতি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং এবার এই ইস্যুতে কেন্দ্র সরকারকে তোপ দেগেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)অভিযোগ করেছেন যে, মোদি সরকার দেশের সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে এবং মধ্যবিত্তদের শেষ সম্বলটুকুও শুষে নিচ্ছে। গত এক সপ্তাহে গ্যাসের দাম প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে গেছে, ফলে ১৪.২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কলকাতায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭৯ টাকায়। সাশ্রয়ী গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বেড়েছে। ফলে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী এবার এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “মোদি সরকারের বিকাশের প্রকৃত অর্থ ভারতীয়দের শেষ সম্বলটাও শুষে নেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “জীবনদায়ী ওষুধ থেকে পেট্রল-ডিজেল, রান্নার গ্যাসের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ধীরে ধীরে মহার্ঘ হয়ে উঠছে।” এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠছে, এবং বিশেষত মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি এক নতুন দুঃস্বপ্নের মতো।
তিনি আরও বলেন, “মধ্যবিত্ত পরিবারের সঞ্চয় ডুবছে, এবং ধারের বোঝা বাড়ছে। এমন অবস্থায়, কেন্দ্রের সরকার পরিবারগুলির সংসারের উপর চাপ আরও বাড়াচ্ছে।” মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তিনি দাবি করেছেন, তারা দেশের সাধারণ মানুষকে একেবারে নিঃস্ব করে দিচ্ছে, এবং জনগণের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তৃণমূলের পুরনো স্লোগানও পোস্ট করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, “বাহবা নন্দলাল, হাজার টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল।” এই স্লোগানটি সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদকে তুলে ধরে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও সমাজের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের (Mamata Banerjee) মতে, মোদি সরকার দেশকে দুর্নীতির পথে পরিচালিত করছে, যেখানে জনগণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম একে একে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনসাধারণের দুঃখ-দুর্দশা আরও বাড়ছে।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বিরোধিতার ঝড় উঠেছে। রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা রাস্তায় নেমে সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সুর চড়াচ্ছেন।
এছাড়া, সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কোনও মিমাংসা করছে না, বরং তাদের আরও খারাপ অবস্থায় ফেলছে। তৃণমূলের নেতারা বলছেন, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়ে গেছে, এবং সরকার মানুষের প্রতি একের পর এক অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও সঙ্কটে পড়েছে।
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে যে, এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধির ফলে রাজ্যের মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি বিরোধিতা আরও বাড়বে এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস এই ইস্যুতে জনগণের সমর্থন নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।
এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকারের এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং আগামী দিনগুলোতে এর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস শক্তিশালীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে।